রিজার্ভ চুরির বেশিরভাগ অর্থই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই : অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৭০ মিলিয়ন ডলার হ্যাকারদের পকেটে চলে গেছে। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে টেলিফোনে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।

চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ চুরি করে। এরপর ওই অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার ব্রাঞ্চের চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই অর্থ পাঠানো হয় ফিলিপাইনের কয়েকটি ক্যাসিনোতে।

ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশ অ্যাকাউন্ট থেকে ফিলিপাইনে পাচার হয়ে যাওয়া মোট ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘ওই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। ওই টাকায় কারা উপকৃত হয়েছেন তা বের করাও শক্ত। তবে বিশাল অংক গেছে জুয়া খেলার ক্যাসিনোগুলোতে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিলিয়ন ডলার চুরির এই চেষ্টা বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বাধ্য করেছে। মুহিত জানান, ফিলিপাইন এই বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও তদন্ত চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এই চুরির সঙ্গে আমাদের কিছু মানুষও জড়িত রয়েছে।’

নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে মুহিত জানান, কোন রকম নিশ্চয়তা ছাড়াই চারটি লেনদেন অনুমোদন করেছে ফেডারেল ব্যাংক। তিনি দাবি করেন, ‘তারাও এই চুরির জন্য দায়ী। তাদের নিরাপত্তা ব্যবাস্থায় ঘাটতি ছিল।’ তবে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক দাবি করে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে লেনদেনে প্রটোকল অনুসরণ করা হয়েছে এবং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউটের সুইফট মেসেজ সিস্টেমের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে।

মুহিত স্বীকার করেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। একে জোরদার করার জন্য উপদেষ্টারা কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রিজার্ভ চুরির বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রিজার্ভ চুরিকে একটি ‘বিরল ঘটনা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে এমন ঘটনা আর ঘটেনি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিরাট অঙ্কের টাকা। এই ঘটনা পুরো পৃথিবীর জন্যই একটি সতর্ক সংকেত। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার ইঙ্গিত দেয় এই ঘটনা।’

এর আগে গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীও জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের সব টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে এডিবির আয়োজনে এক কর্মশালা শেষে এস কে সুর সাংবাদিকদের বলেন,‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে টাকা চুরি হয়েছে তার কিছু অংশ ফেরত পাওয়া যাবে। তবে সব টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ সূত্র: ব্লুমবার্গ



মন্তব্য চালু নেই