রিজার্ভের ১৫ মিলিয়ন ডলার পেতে আগস্টের মধ্যে আবেদন

রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনতে ১৬ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে ফিলিপাইনের আদালতে আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, রিজার্ভের চুরিকৃত অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইন হতে দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনার পর হতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় চুরির অর্থের একটি অংশ দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমে ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসহ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত আইনজ্ঞ সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ টাকা ফিরিয়ে আনতে আগামী ১৬ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে এফিডেভিটের মাধ্যমে ফিলিপাইনের আদালতে আবেদন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (এমএলএ) রিকয়েস্টের আওতায় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আদালতে অর্থ ফেরতের আবেদন করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এফিডেভিট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারি হিসাব হতে মোট ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন (পিআই)-এর মাধ্যমে ১ হাজার ৯২৬ মিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়।

এরমধ্যে ১টি পিআই এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন ডলার এবং ৪টি পিআই’র বিপরীতে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চার গ্রাহকের হিসেবে পাঠানো হয়।

শ্রীলঙ্কার ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে সম্পূর্ণ অর্থ ইতোমধ্যে ফেরত পাঠিয়েছে।

ফিলিপাইনে পাঠানো ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-এর ৪টি হিসেবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী তুলে নেয়।

মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর হয়। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা ত্বরান্বিতকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই সদস্যের একটি দল ফিলিপাইন যায়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের ভার তাদের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)-এর ওপর অর্পণ করে।

এএমএলসি আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করে এবং ফিলিপাইনের আদালত থেকে ১ মার্চ ওই বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের চূড়ান্ত সুবিধাভোগীদের হিসাবগুলো আরসিবিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখাসহ তিনটি ব্যাংকের সম্পৃক্ত হিসাবগুলো স্থগিত করাসহ (ফ্রিজ) আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ জারি করে। সে মোতাবেক এএমসিএল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মোট চারবার ফিলিপাইন গেছেন। এ সময় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে সভা করেন এবং সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা চান।

সর্বশেষ গত ১ থেকে ৫ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এবং যুগ্মপরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব ফিলিপাইন যান। এ টিমকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ আইনজ্ঞ আজমালুল হোসেন কিউসি ও এ টিমের সঙ্গে ফিলিপাইন যান।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সেক্রেটারি (আইনমন্ত্রী), সলিসিটর জেনারেল, চিফ স্টেট কাউন্সেল, ক্যাসিনো সেক্টরের রেগুলেটরের প্রেসিডেন্ট ও চিফ অপারেটিং অফিসার, এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের প্রধান কর্মকর্তা, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সভা করেন।



মন্তব্য চালু নেই