রায় পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি

দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকায় তাৎক্ষকিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে চাচ্ছেন না বিএনপির দায়িত্বশীল ও শীর্ষ নেতারা। রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললেও কেউই এ বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত দিতে চাননি। কেউ কেউ নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন।

তবে রায় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বিকেলের দিকে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে দলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর দ- কার্যকরে আর আইনি বাধা থাকল না। নিয়ম অনুযায়ী তারা এখন কেবল নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে সরকার পদক্ষেপ নেবে।

রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। দলের পক্ষ থেকে রায় পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমদ আজম খানও এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনো মত প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেব না। দল জানাবে।’

রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে বিএনপির দফতর সূত্র জানিয়েছে, বিকেলের দিকে দলের পক্ষ থেকে রায়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় বহাল রাখায় হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি।

ওই সময়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন এবং তিনি ন্যায়বিচার লাভ করেননি। বিচার প্রক্রিয়ায় আইনি স্বচ্ছতার অভাব এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে রাজনৈতিক চাপ ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযুক্ত হওয়ায় আমরা বিস্মিত। তার আইনজীবীদের মতো আমাদের দলও মনে করে তিনি ন্যায় বিচার লাভ করেননি। অন্যায্যভাবে তাকে মৃত্যুদ-াদেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ ও সত্যিই মর্মাহত।’

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় বহাল রাখায় আমরা হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছি।’

সালাহউদ্দিন কাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দাবি করে রিপন বলেন, ‘আমাদের দল আরো মনে করে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচারে আইনি স্বচ্ছতার অভাব ও নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে।’

বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বা তাদের অপরাধের বিচারের ব্যাপারে শুরু থেকেই বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট । আমরা সর্বদা এ বিচারের পক্ষে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম, এই বিচারের প্রক্রিয়া হতে হবে সকল রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত পরিবেশে, স্বচ্ছ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদ-ের ওপর ভিত্তি করে। এটা কোনোভাবে যেন কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার না হন এবং অভিযুক্তদের প্রতি যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হয়।’

‘আমরা লক্ষ্য করছি, এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি বরাবর আস্থা রেখে এসেছি’, বলেন রিপন।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী যেসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তিনি তার সংশ্লিষ্টতা সব সময় অস্বীকার করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি যে দেশে ছিলেন না, এর স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদিও মাননীয় আদালতের বিবেচনায় উপস্থাপন করেছিলেন। ওই সময়ে দেশে তার অনুপস্থিতির দাবির স্বপক্ষে তিনি দেশে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককেও সাক্ষী মেনেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি ।’



মন্তব্য চালু নেই