সাকা, মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ

রায় কার্যকরে ১৫ দিনের জটিলতা

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের চূড়ান্ত রায়ের কপি প্রকাশিত হয়েছে। এখন তাদের ফাঁসি কার্যকর করতে রাষ্ট্র বসে থাকবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।

আসামিপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলে ফাঁসির রায় কার্যকর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। আর রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হবে।

তবে অ্যাটর্নির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে আমরা অনেক আগেই আবেদন করেছি। সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে আমরা এ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ফাইল করবো। এসময় পর্যন্ত কেউ আমাদের মক্কেলদের রায় কার্যকরে ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। আর যদি কেউ ফাঁসি কার্যকরে ব্যবস্থা নেয় সেটি হবে আইনত কর্তৃত্ব বহিঃর্ভূত।’

বুধবার রায় প্রকাশের পর এই দুই আইনজীবী এমন মন্তব্য করেন।

শিশির মনির বলেন, ‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত নয়, আসামিপক্ষ এ কপি হাতে পাওয়ার পর রিভিউ ফাইল করার পরে সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকরে কেউ পদক্ষেপ নিতে পারবে না। যদি সেটি নেয়া হয় তাহলে তা হবে আইনের বাহিরের সিদ্ধান্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর দেখবো কোথায় কোথায় এ রায়ের অসঙ্গতি আছে, সেগুলো ফাইন্ডআউট করবো। এরপর রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে আদালতে উপস্থাপন করবো। আমরা আশা করছি আদালত আমাদের রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে আসামিকে খালাস প্রদান করবেন।

দুপুরে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আপিলের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হয়।

মুজাহিদের ১৯১ ও সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ চার বিচারপতি । অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, রায় কার্যকর করতে আর মাত্র তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে পূর্ণাঙ্গ রায়টি ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। সর্বোচ্চ আদালত এ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করতে পারবেন তিনি।

saka-mujahidমাহবুবে আলম বলেন, ‘আইন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্র। আর আপিল বিভাগের দেয়া সময় অনুসারে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন আসামিপক্ষ। যখনই পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন তারা, তখনই মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।’

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবো।’ তবে রায় প্রকাশের দিন থেকে নয়, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর থেকে ১৫ সময় পাবেন বলে দাবি করেন তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এর আগে গত ১৬ জুন আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ ও ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

সাকা, মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ



মন্তব্য চালু নেই