রাহুল না প্রিয়াঙ্কা, নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসে দ্বন্দ্ব

দিলিপ মজুমদার, কলকাতা (ভারত) : লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে। দলের ভেতর থেকে দাবি উঠছে বোন প্রিয়াঙ্কাকে ফ্রন্ট লাইনে আনার। ঠিক তখনই রাহুলের ঘনিষ্ঠজনেরা এর বিরোধিতা শুরু করেছেন।

যদিও দলের ভরাডুবির দায় রাহুল গান্ধী স্বীকার করে নিয়েছেন তারপরেও তার এক অনুসারী দাবি করেছেন, রাহুল গান্ধী জানুয়ারিতে প্রচারণায় অংশ না নিলে দলের আরো ভরাডুবির হতে পারতো। ওই নেতা আরো বলেন, ‘আমরা ভরাডুবি রুখতে সক্ষম হয়েছি, কংগ্রেস ও ইউপিএর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতেও সক্ষম হয়েছি।’

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় পুরোভাগেই ছিলেন রাহুল গান্ধী। জানুয়ারি থেকেই লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রিয়াঙ্কাকে কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা না গেলেও গান্ধী পরিবারের প্রতি বিজেপি ও মোদির পক্ষ থেকে বেশ কিছু আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসার পর তাকে জ্বলে উঠতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য শশি থারুর বলেন, ‘অপরীক্ষিত একজন অভিনেতার জন্য সবচেয়ে ভালো অভিনেত্রীকে বসিয়ে রাখা অনেকটা তার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়ার মতো।’ থারুর এ বক্তব্য ঠিক তখনোই এল যখন দলটির ভেতরে একটি অংশ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আরো সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী থমাস বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সোনিয়া, রাহুলের পাশাপাশি প্রিয়াঙ্কাকেও রাখার জন্য সোনিয়া গান্ধীকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। প্রিয়াঙ্কার দিকে দেখলে আমাদের মহান নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কথা মনে পড়ে যায়।’

লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়া রায়বেরেলি, রাহুল আমেথি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে প্রিয়াঙ্কা কোনো আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ৪২ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা মূলত রায়বেরেলি এবং আমেথিতে মা ও ভাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানি দেখাশোনা করেন।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করেন দলটির বিভিন্ন নেতা। বৃহস্পতিবার দলটির নেতা মিলিন্দ দেওড়া এবং প্রিয়া দত্ত দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘নেতা এবং তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ নেই।’ রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টাদের প্রতি ইঙ্গিত করে মিলিন্দ দেওড়া একটি টুইটও করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম এবং নির্বাচনের সাফল্যই বাস্তবতা প্রমাণ করে। এই দুটি বিষয়কে ভিত্তি করেই কংগ্রেসে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা উচিৎ।’

দেওড়ার টুইট প্রসঙ্গে শনিবার কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘এর মাধ্যমে রাহুলের উপদেষ্টা নয় বরং রাহুলকেই আক্রমণ করা হয়েছে।’ রাহুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই নেতা আরো বলেন, ‘দল ১৯ শতাংশ ভোট পেলেও বেশি আসন জিততে পারেনি। বিগত নির্বাচনে বিজেপিরও একই অবস্থা হয়েছিল। বিজেপি সেবার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেলেও ১২২টি আসন পেয়েছিল।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির ঘটনায় পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী। তবে তাদের ওই পদত্যাগের আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে দলের নীতি নির্ধারণী কমিটি। অবশ্য সমালোচকরা এ ঘটনাকে ‘নাটক’ বলে অভিহিত করছেন।



মন্তব্য চালু নেই