রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে বিল

এবার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি অধিবেশনে সংসদ কার্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি বিল উত্থাপন করেন।

বিল তিনটি হলো, দ্যা প্রেসিডেন্টস (রেম্যুনারেশন এন্ড প্রিভিলেজেস) (এমেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬, দ্যা প্রাইমিনিস্টারস (রেম্যুনারেশন এন্ড প্রিভিলেজেস) (এমেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬, দ্যা মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্ট্যাট এন্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেম্যুনারেশন এন্ড প্রিভিলেজেস) (এমেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬। সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিল তিনটি সংসদে উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে।

এর আগে গতকাল জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করে জাতীয় সংসদে পৃথক দুটি বিল উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বিল দুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদে সোমবার উত্থাপিত বিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেতন ৯৬ ভাগ এবং ভাতা প্রায় তিন গুণ বাড়িয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাব হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতির বেতন ৬১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন ৫৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন ৪৭ হাজার ৮০০ থেকে বৃদ্ধি করে ৯২ হাজার টাকা এবং উপমন্ত্রীর বেতন ৪৫ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ায় এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা সামঞ্জস্য রক্ষা করে পুণঃ নির্ধারণের লক্ষে বিদ্যমান আইনের অধিকতর সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিল উপস্থাপন করা হলো।

এর আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ৩১ মন্ত্রী, ১৮ প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। আর মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রয়েছেন পাঁচজন।

রাষ্ট্রপতি : বিলে রাষ্ট্রপতির বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে তার বীমার জন্য আগের ১৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিলে আগের মতই দুই কোটি টাকা থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী : সংশোধিত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর বেতনের সঙ্গে অন্য যে সব ভাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা হলো- তিনি বেসরকারি বাড়িতে থাকলে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ পাবেন ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর বিমানভ্রমণে বীমার সীমা ১৪ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা হারে পাবেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার এক কোটি থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মন্ত্রী-উপদেষ্টা : মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় নিয়ামক ভাতা ছয় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। মন্ত্রীরা বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে বাসা ভাড়া পাবেন ৮০ হাজার টাকা। আগে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। তবে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে এখন ২৫ হাজার টাকা ভাতা পান। এছাড়া মন্ত্রীদের বিমানভ্রমণে বীমার সীমা পাঁচ লাখ থেকে বাড়িয়ে আট লাখ, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী : প্রতিমন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় নিয়ামক ভাতা চার হাজার থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে সাত হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসের ক্ষেত্রে ভাতা ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার, বিমানভ্রমণে বীমার সীমা পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

উপমন্ত্রী : উপমন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় নিয়ামক ভাতা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসে ভাতা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা, বিমানভ্রমণে বীমার সীমা পাঁচ লাখ থেকে বাড়িয়ে আট লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের পরিমাণ তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরে বিলগুলো পরিক্ষা নিরীক্ষার জন্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই