রামেকে সনদ পেল না ইন্টার্নিরা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের (ইন্টার্নি) প্রশিক্ষণকাল শেষের সনদপত্র দেয় নি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দুপুরে প্রশিক্ষণ কালের শেষদিন ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে সনদপত্র নেয়ার জন্য যান।
উচ্চতর কোর্সে ভর্তি হওয়ার ফরমপূরণ করার জন্য তারা সনদপত্র চাইলে রামেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন তাদের সনদ না দিয়েই ফিরিয়ে দেন।
রামেকের ৪৯তম ব্যাচের ১১৫ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শনিবার তাদের এক বছরের প্রশিক্ষণকাল শেষ করেন। তবে সাংবাদিক পেটানো ও চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানানোসহ নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠে এ ব্যাচের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।

এদিকে, সাংবাদিককে চিকিৎসা দিতে অপারগতা জনানোর বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের প্রেক্ষিতে শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: ইকবাল বারিকে সভাপতি ও উপ-পরিচালক আ.স.ম বরকতউল্লাহকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৩ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- মেডিসিন বিভাগের দুই অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আজাদ ও ডা. মাহাবুর রহমান খান বাদশা।

শনিবার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা সনদ নিতে গেলে রামেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন উদ্ভুত জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত সনদ দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন।
এসময় পরিচালক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘তোমাদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের উচ্চতর আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিককে চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানানোর বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি এবং গত ২০ এপ্রিল সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের সনদপত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে কাউকে সনদপত্র দেয়া হবে না বলে জানান পরিচালক নাসির উদ্দিন।
উপ-পরিচালক ডা. আ.স.ম বরকতউল্লাহ বলেন, ৪৯তম ব্যাচের ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১৫ জন শনিবার তাদের প্রশিক্ষণকাল শেষ করেছেন। বাকি ৪৪ জন অকৃতকার্য হওয়ার কারণে ছয় মাস পরে প্রশিক্ষণ শুরু করেছেন। তাদের সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আরো ২০ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ডা. বরকতউল্লাহ আরো বলেন, ‘শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণকাল শেষে হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তাদের সনদপত্র ইস্যু করে। তাদের প্রশিক্ষণকাল মূল্যায়ন করে সুপারিশ করেন বিভাগীয় প্রধানরা। আর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড ডক খাতায় লিপিবদ্ধ করেন ওয়ার্ডের রেজিস্টার। প্রশিক্ষণকাল শেষে প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের সনদপত্র দেয়া হয়। তবে কেউ সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ শেষ না করলে বিনা ভাতায় এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত ফের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। এখনো ওয়ার্ডের প্রতিবেদনসহ বিভাগীয় প্রধানদের সুপারিশ তাদের কাছে পৌঁছে নি।’

তবে যে কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সনদপত্র নিতে এসেছিলেন তারা উচ্চতর কোর্সে ভর্তির ফরম পূরণের জন্য বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশ নিয়েছেন বলে বরকতউল্লাহ জানান।

রামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার আবু রায়হান জানান, রামেকে ৬ মাস মেয়াদি দুইটি উচ্চতর কোর্স করানো হয়। তবে ওইসব উচ্চতর কোর্স রামেক হাসপাতালে হয়ে থাকলেও অন্য দুইটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে হয়ে থাকে। প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে দুইবার এসব প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের। এসব কোর্সে সরাসরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়েছে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। তাদের প্রশিক্ষণকালে চার দফায় আটদিন তারা ধর্মঘট পালন করেছেন। এছাড়াও তাদের কাছে হাসপাতালের কর্মচারি থেকে শুরু করে রোগী ও তাদের স্বজনরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রমতে, সর্বশেষ গত ৬ মে স্থানীয় দৈনিক নতুন প্রভাতের আলোকচিত্র গুরবার আলী জুয়েলকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানানোর কারণে তাদের নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে তাদের সনদপত্র দেয়া থেকে কেন বিরত থাকা যাবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল রোগীর স্বজনদের মারপিট করে এ ব্যাচের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারপিট করে তারা। এতে অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হন এবং দুইটি ক্যামেরা ছিনতাই ও তিনটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর উল্টো তারা তিনদিন অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করেন।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০ জনকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়ার প্রতিবাদে গত বছরের ২১ নভেম্বর একদিনের ধর্মঘট পালন করেন এ ব্যাচের শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে। এর আগে একই বছরের ১০ এপ্রিল এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়। এর প্রতিবাদে তারা আধাবেলা ধর্মঘট পালন করে। এর চারদিন আগে ৬ এপ্রিল একই ধরণের ঘটনায় দুইদিন ধর্মঘট পালন করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।



মন্তব্য চালু নেই