রামপালে ‘গোপনে অর্থায়ন’ করছে বিশ্বব্যাংক

এশিয়ায় কয়লা চালিত বিদ্যুত উৎপাদন খাতে ‘গোপনে’ অর্থ সহায়তা করেছে বিশ্ব ব্যাংক। তারা এ খাতে অর্থায়ন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরোক্ষে এ কাজটিই করে যাচ্ছে। এমন সহায়তা যেসব প্রকল্প পাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রামপালে ১৩৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র।

এএফপির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পটি সুন্দরবনের বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বনের প্রান্ত ঘেঁষে এ অবস্থিত। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বসবাস এই বনে। এ ছাড়া প্রায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বনও এটা। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ৬টি ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। এ ব্যাংকগুলোতে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তাতে সুন্দরবনের বাতাস ও পানি দূষিত হয়ে পড়বে। এতে হুমকিতে পড়বে সুন্দরবন। ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি উন্নয়ন পরামর্শ বিষয়ক গ্রুপ এক রিপোর্টে এসব কথা বলেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ও অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংক তার নীতি পরিবর্তন করে। তখন তারা বলেছিল, কয়লা চালিত বিদ্যুত উৎপাদন খাতে কার্যত সব ধরনের সমর্থন বন্ধ করবে তারা। ওই প্রতিশ্রুতির পর বিশ্ব ব্যাংক ও তার অঙ্গ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অর্থায়ন করেছে ৪১টি কয়লা চালিত বিদ্যুত প্রকল্পে। পরোক্ষভাবে আইএফসি অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে কয়লা চালিত বিদ্যুত প্রকল্পে ৫৬১২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতায়। কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, অসুস্থতায় অকাল মৃত্যু সহ বন উজার করায় ভূমিকা রাখে। এমন বিদ্যুত কেন্দ্রের বিস্তার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত। গোপনে অর্থায়নের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের মুখপাত্র ফ্রেডেরিক জোনসের কাছে জানতে চায় বার্তা সংস্থা এএফপি। জবাবে তিনি বিশ্ব অর্থনীতিতে ঋণদাতা এ প্রতিষ্ঠানটি এ অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি বা বিদ্যুতের বাজার শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা উচিত। একই সঙ্গে দেশগুলোকে প্রণোদনা দেয়া উচিত। কয়লা সংশ্লিষ্ট খাতে বেসরকারি বিনিয়োগও করা উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, ২০০৫ সাল থেকে আইএফসি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানির কার্যক্ষমতা ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে ১৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এ ছাড়া ১০০০ কোটি ডলার সচল করা হয়েছে। ফ্রেডেরিক জোনস স্বীকার করে নেন যে, কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আইএফসির নীতিতে কোনো বাধা নেই। এর অর্থ হলো এ প্রতিষ্ঠানটি পরোক্ষভাবে এ খাতে অর্থায়ন করে থাকতে পারে। ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এমন সময়ে তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যখন এই সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাংকে ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা বার্ষিক বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এ বৈঠকে বিশ্বের দারিদ্র্য নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন বিশ্বের এই দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল তার রিপোর্টে ফিলিপাইনে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেছে। সেখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হলে তাতে বছরে কয়েক হাজার প্রার্ণী অকালে মারা যাবে। এ দেশটিতে ২০১৫ সালেই শুধু ৩০ জন পরিবেশবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ফিলিপাইনে কমপক্ষে ২০টি নতুন কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে সহায়তা দিয়েছে আইএফসি অর্থায়নে চলা ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে রয়েছে প্রস্তাবিত ৫৪০ মেগাওয়াটের লানাও কুউসওয়াগান বিদ্যুত কেন্দ্র। এ প্রকল্পটি আগামী বছর বিদ্যুত উৎপাদনে যাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। ততে এর ফলে পার্শ্ববর্তী পাঙ্গুইল উপসাগরের জলজীবন হুমকিতে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেলে সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা।খবর মানব জমিনের।



মন্তব্য চালু নেই