রাণীনগরে বন্যার পানি কমলেও বেড়েই চলছে দূর্ভোগ

নওগাঁর রাণীনগরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে পানিবন্দী মানুষদের বাড়ছে নানা দূর্ভোগ। পানি কমার সাথে সাথে ভেঙ্গে পড়ছে মাটির তৈরি অসংখ্য ঘড়বাড়ি। বন্যার পানি দূষিত হওয়ায় বানভাসী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চুলকানি, পচড়া,ডায়রিয়া , আমাশয়সহ নানা পানিবাহিত রোগে।

বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে গৃহপালিত পশুপাখি। কামড় থেকে রেহাই পাচ্ছেনা বানভাসী মানুষও। ত্রাণ সামগ্রী , বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা বানভাসী মানুষদের কাছে না পৌঁছার কারণে বন্যা দূর্গত এলাকায় এখন শুধুই হাহাকার বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গত ২৪ আগষ্ট ভোরে রাণীনগর-আত্রাই সড়কের পূর্ব মিরাপুর নামক স্থানে পানির চাপে সড়ক ভেঙ্গে রাণীনগর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

হাজার হাজার হেক্টর জমির চলতি মৌসুমে রোপা-আমন ধান ও মৌসুমি সবজির ক্ষেত তলিয়ে যায়। বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢোকাই অনেক পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে কিছু কিছু সরকারি সাহায্য পৌছলেও অনেক স্থানেই তা পৌছেনি। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে পানিবন্দী ও বানভাসী এসব লোকজন।

বর্তমানে এ উপজেলায় কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে উপজেলার চামটা, বাঁশবাড়িয়া, ভাটকৈ, শলিয়া, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাটির তৈরি প্রায় ২শ’৫০টি ঘড়-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বন্যার পানি দূষিত হওয়ায় দেখা দিয়ে চুলকানি, পচড়া,ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ। উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩শ’টি গভীর-অগভীর নলকূপ পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকটে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে বানভাসী মানুষ। বন্যার পানিতে উচু ভিটা-মাটি তলিয়ে যাওয়ার কারণে সাপের উপদ্রপও বেড়েই চলছে।

গত ১৬ দিনে উপজেলার সিম্বা, লোহাচুড়া, খাগড়া, ছয়বাড়িয়া, বোদলা, পালশা, তেবারিয়া, চক, ভবানিপুর, সর্বরামপুর, বড়িয়া, খাসগড়, শলিয়া, চামটা, ভাটকৈসহ বিভিন্ন গ্রামে বিষাক্ত সাপের কামড়ে অসংখ্য গৃহপালিত পশু-পাখি মারা গেছে। এছাড়াও সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন উপজেলার বেশ কিছু মানুষ। যথা সময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন বলে জানান, সাপের কামড়ের শিকার হওয়া একাধিক ব্যক্তি।

উপজেলার শলিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মহসিন মল্লিক জানান, আমার এলাকার জমিতে চলতি মৌসুমে রোপনকৃত রোপা-আমন ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং অনেক পুকুর ডুবে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

তবে কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি কমলেও আমাদের দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পানি দূষিত হওয়ায় নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবন্দী মানুষ। সাপের কামড়ে আমার এলাকায় বেশ কিছু গরু-ছাগল মারা গেছে। দুই একজনবানভাসী মানুষও সাপের কামড়ের শিকার হয়েছিল তারা যথা সময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন।

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: এসএম নজমুল আহসান জানান, পানিবাহিত রোগ মোকাবেলায় আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা বানভাসী মানুষের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বন্যা দূর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ১৯ হাজার ট্যাবলেট আমরা পেয়েছি।

সেগুলো পানিবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আর সাপের কামড়ানো মানুষের চিকিৎসার জন্য আমাদের কাছে প্রতিষেধক যা আছে তা দিয়ে হয়তো একজনকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, সরকারি পর্যায় থেকে যতটুকু ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে তা আমরা বানভাসী মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি।

জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা আরো চাহিদাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে ওই এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি এবং উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই