রাণীনগরে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা ॥ মাঠে এখন সবুজের সমারোহ

নওগাঁর রাণীনগরে চলতি রবিশস্য মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চাষযোগ্য জমিতে মাঠে মাঠে এখন শুধু আলু গাছের সবুজ রং এর সমারোহ। গত বন্যার কারণে এই উপজেলায় রোপ-আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় মাঠে মাঠে রবিশস্যের উপযুগি চাষযোগ্য জমিতে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠে। সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ সহ রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে যথা সময়ে বিতরণ করায় এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় কৃষকদের আগাম জাতের আলু লাগানো সম্ভব হয়েছে।

চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং আলু চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকায় নিবির পরির্চ্চা, স্থাণীয় কৃষি বিভাগের যথাযথ পরামর্শ ও আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে রোগবালাই মুক্ত হওয়ায় অন্যান্য রবিশস্যের পাশাপাশি আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।

গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এবার ডায়মন্ড, লালপাকরী ও দেশী জাতের আলু লাগিয়েছে। যথা সময়ে আলু ঘরে তুলতে পাড়লে এবং চাহিদা ও বাজার মূল্য ভাল থাকলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

জানা গেছে, চলতি রবিশস্য মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর উপজেলায় প্রায় ১৩শ’ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। শুরুতেই আলুর ক্ষেতে বন্যার প্রভাবের কারণে নানা ধরনের পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে আলু চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে আলু ক্ষেত প্রায় শত ভাগ রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

যথা সময়ে সরকারী পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বন্যার পানি ধীর গতিতে নেমে যাওয়ায় বেশ কিছু জমি আলু চাষের উপযুগী না হওয়ায় কৃষকরা ঠিক সময়ে আলু লাগাতে পাড়েনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকছেন।

আগামী ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আলু, সরিষা, গম ও ভোট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। উপজেলার সদর, বড়গাছা, মিরাট, কাশিমপুর, গোনা ও পারইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আজিজার রহমান জানান, আমি এবছর প্রায় ২বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে ভাল জাতের দেশী আলুর বীজ কিনে জমিতে লাগিয়েছি। এপর্যন্ত আলু গাছের গঠন দেখে মনে হচ্ছে আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল হলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।

খট্টেশ্বর গ্রামের আলু চাষি সামছূর রহমান জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে লালপাকরী জাতের আলু লাগিয়েছি। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রোগবালাই আক্রমন না করলে এবছর আলুর ভাল ফলন পাব বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, রাণীনগরে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমান আলু চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে আলু লাগিয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্চার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে রাণীনগর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় আলু চাষের জমিগুলোতে কিছু পরিমান উদ্ধবৃত্ত সারের শক্তি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।



মন্তব্য চালু নেই