রাণীনগরে আমন ধান কাটা পুরোদমে শুরু ॥ দরপতনের আশংকায় নবান্ন উৎসবে ভাটা

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। এবছর বন্যার ধকলের সত্তেও আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের গোলায় ধান উঠতে না উঠতেই দরপতনের আশংকায় কৃষকরা হতাশ হওয়ায় অগ্রায়নের জামাই মেয়ে আত্মীয় স্বজন আনা নেওয়ার এই এলাকার সবচেয়ে বড় নবান্ন উৎসবেও ভাটা পড়ছে।

প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে প্রচুর পরিমান চাল আমদানী, ধান কাটা শ্রমিক সংকট, বাজারে ধানের চাহিদা কম, আমদানি বেশি হওয়ায় উপজেলার প্রতিটি হাটে ধানের দর নিম্মমুখীর কারণে এই জনপদের অসহায় কৃষকের এখন মাথায় হাত। বন্যায় কৃষকের বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার পরেও যে পরিমান ধান কৃষকরা পাবে তা বিক্রয় করে সংসারের সারা বছরের খরচ সহ আগামী ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য স্থানীয় কৃষকরা আগাম কিছু ধান বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে।

জানা গেছে, রোপা-আমন মৌসুমে রাণীনগর উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ১৮হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষকরা নিজ নিজ জমিতে ধান রোপণের শেষে নিড়ানীর সময় যখন চলছিল ঠিক সেই মহুর্তে অতি বৃষ্টিপাত উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় নওগাঁ জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে রাণীনগর উপজেলায় আবাদী ফসল, ঘড়-বাড়ি, রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

বন্যার কারণে প্রায় সাড়ে ৭হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানিতে তুলিয়ে গিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ফলে ১০হাজার ৩শ’ হেক্টর জমির ধান রক্ষা পায়। উপজেলার গ্রাম অঞ্চলে এক যোগে রোপা-আমন ধান কাটার ভরা মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে কৃষকদের ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা পর্যস্ত গুণতে হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় শুরু না করায় বাজার দর দিনদিন নিম্মমুখী হচ্ছে। উপজেলায় তালিকা ভূক্ত ১শ’ ৩৪টি হাসকিং চাউল কল থাকলেও সরকারী পর্যায় থেকে ধান-চাল ক্রয়ের নির্দেশনা না আসাই অধিকাংশ মিল মালিকরা চাতাল বন্ধ করে অলস সময় কাটাচ্ছে। তারা বলছে বাজারে চালের চাহিদা কম থাকায় ইরি-বোরো মৌসুমে মজুদকৃত চাল বিক্রয় করতে লোকসান হওয়ার কারণে হিমশিম খাচ্ছে। তাই রোপা-আমন ধান ক্রয় করতে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

যার ফলে এবছর জামাই মেয়ে আত্মীয় স্বজন আনা নেওয়ার এই এলাকার সবচেয়ে বড় নবান্ন উৎসবেও ভাটা পড়ছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম আবাদপুকুর হাট ঘুড়ে দেখা গেছে, প্রচুর ধানের আমদানী।

ক্রেতা কম থাকায় স্বর্ণা ৫জাতের ধান প্রতি মন ৫শ’ ৮০ থেকে ৬শ’, বিনা ৭ জাতের ধান প্রতি মন ৬শ’ থেকে ৬শ’ ২০টাকা, পাইজাম জাতের ধান প্রতি মন ৯শ’ ৫০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

উপজেলার জেঠাইল গ্রামের বর্গাচাষি সাহাজুল ইসলাম জানান, আমি এবছর চার বিঘা জমি এক বছরের জন্য ৫৮হাজার টাকা পত্তন নিয়েছি। ইরি মৌসুমে প্রতি বিঘাই ২০মন ধান ও রোপা মৌসুমে ১৫মন ধান পেয়েছি। যা বিক্রয় হয়েছে ২৩হাজার টাকায়। সব কিছু হিসাব অন্তে আমার কিছুই থাকবে না।

আবাদপুকুর হাটের বিশিষ্ট ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, হাটে প্রচুর ধানের আমদানী। মিল মালিকরা পুরোদমে ধান ক্রয় না করায় বাজার ধর দিনদিন কমে যাওয়ার ফলে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শীতানাথ ঘোস জানান, ভারত থেকে প্রচুর পরিমান চাল আমদানি করায় আমাদের দেশীয় চালের দাম কম থাকায় ইরি মৌসুমের চাল এখনো অনেক মিলে অবিক্রীত রয়েছে।

লোকসানের আশংকায় মিল মালিকরা নতুন ধান বেশি করে ক্রয় করতে সাহস পাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, বন্যার কারণে কৃষকের অনেক ক্ষতি হওয়ার পরেও যে পরিমান ধান হয়েছে বাজার মূল্য যদি একটু বেশি থাকতো তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে ইরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠতো। বর্তমানে আমনের বাজার মূল্যেও কারণে কৃষকরা অনেক কষ্ট আর হতাশায় আছে।



মন্তব্য চালু নেই