রাজন হত্যার আরেক আসামি ময়না গ্রেফতার

সিলেটে পৈশাচিক নির্যাতনে ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার আরেক আসামি চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শহরের টোকেরবাজার এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জালালাবাদ থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশানর মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শিশু রাজনকে সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁওয় এলাকায় বুধবার সকালে চোর অপবাদ দিয়ে দোকানের খুটির সঙ্গে বেধে পিটিয়ে হত্যা করে পাষণ্ডরা। তার মৃত্যুর পর মাইক্রোবাসে করে লাশ গুমের চেষ্টাকালে মুহিত আলম (৩২) নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করলে পুলিশ তাকে প্রধান আসামি করে ঘটনায় জড়িত আরও তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে।

মামলার অপর আসামিরা হলো— মুহিত আলমের ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫)।

তাদের মধ্যে কামরুল ইসলাম সোমবার সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক হয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া তাদের আরেক সহযোগী ইসমাইল হোসেন আবলুছকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হয় চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না। তবে এই হত্যা মামলার আরেক আসামি আলী হায়দার ওরফে আলী এখনও গ্রেফতার হয়নি।

এদিকে, শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামকে মঙ্গলবার রাতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাত ৯টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া আসামি কামরুল ইসলামকে বিদেশ পালাতে সহায়তা ও জালাবাদ থানা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তদন্তে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন— উপ-কমিশনার মুশফেকুর রহমান ও ডিসি (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা।

পৈশাচিক ও নির্মম নির্যাতনে নিহত শেখ সামিউল আলম রাজন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাসচালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে বাবার সঙ্গে পরিবারের হাল ধরে ১৩ বছরের শিশু রাজন। বুধবার ভোরে স্থানীয় টোকেরবাজার থেকে সবজি কিনে ভ্যানে করে বিক্রি করার জন্য বাসা থেকে বের হয় শিশুটি।

পরে কুমারগাঁওয় এলাকায় তাকে চোর অপবাদ দিয়ে দোকানের খুটির সঙ্গে বেধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রেফতার আসামিরা। এ সময় শিশু রাজন হত্যাকারীদের কাছে পানি চাইলে তাকে শরীরের ঘাম খেতে বলে। শেষ পর্যন্ত সেখানেই মৃত্যু হয় রাজনের। এমনকি হত্যাকাণ্ডের সেই ভিডিওচিত্র হত্যাকারীদের একজন মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।



মন্তব্য চালু নেই