রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমেছে

রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ বছর বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ কারণে অর্থবছর শেষে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে রোববার সকালে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ পূবার্ভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু এবার, প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে এ বছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা (২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। আগামী ২০১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়তির দিকে যাবে। সে সময় বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

কিন্তু এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো খাতে সংস্কার, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উন্নয়নসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট, প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, প্রাকটিস ম্যানেজার শুভব চৌধুরী ও যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরীন এ মাহবুব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। কেননা, দ্রুত ও টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে এটি। অন্যান্য চ্যালেঞ্জ হলো, মুদ্রা বিনিময় হার আর্থিক খাতের জবাবদিহিতা ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

বিশেষ করে স্পেশাল ইকনোমিক জোনে বিনিয়োগ, বেসরকারি খাতের মনিটরিং, ক্রয় পরিবেশ, তৈরি শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য জমির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, পরিবহন সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমাধান এবং যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারীদের অংশ গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূর করা।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট বলেন, ‘মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল (এমডিজি) লক্ষ্য পূরণে ভাল করেছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সোচ্চার ভূমিকা রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন ব্রিকস ব্যাংক এবং এআইবি ব্যাংকে বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানাই। কেননা, প্রতিবছর অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা বিশ্বব্যাংক বা বর্তমান অন্যান্য সংস্থাগুলো সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নতুন ব্যাংক দুটো এ গ্যাপ পূরণ করবে। পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজেট সাপোর্ট পেতে হলে সরকারকে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। সেই শর্তেই সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে।’

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা যাবে। তবে বর্তমানে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কিছুটা অস্থিতিশীলতা দেখা গেলেও তা এখনও সহনীয় আছে।’

তিনি বলেন, ‘ঘাটতি অর্থায়নের কোনো সমস্যা হয়নি। রিজার্ভে হাত দিতে হয়নি। কাজেই বলা যায়, বহিঃবাণিজ্যে কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে, এদিকে নজর দিতে হবে।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মুদ্রানীতিতে সংযত নীতিমালা অব্যাহত আছে। মুদ্রানীতির যে লক্ষ্য তা থেকে বিচ্যুতির সম্ভাবনা নেই। তবে মুদ্রানীতিতে এত সংযত হয়েছে যার কারণে ব্যাংক সুদের হার বেড়েছে। এখানে যদি সম্প্রসারণমুখী হতো তাহলে সুদের হার কমতো। এটাই স্বাভাবিক ধারণা। তবে বাংলাদেশে সুদের হার অস্বাভাবিক বেশি নয়। তারুণ্যের তুলনায় সুদের হার আরও কমতে পারতো।’

তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অবশ্যই নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। যেটি বর্তমানে ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ আছে সেটি ৪৮ শতাংশে আগামী ১০ বছরে নিয়ে যেতে পারলে প্রতিবছর জিডিপিতে যোগ হবে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।’



মন্তব্য চালু নেই