রাজধানীর এই রেললাইন যেন মরণফাঁদ, ২ বছরে ৩৪ জনের মৃত্যু

রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে মালিবাগ পর্যন্ত রেললাইনটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। রেললাইন দিয়ে চলাচল দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ার পরও অসতর্ক চলাচলের ফলে অকালে অনেক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে এ রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন এবং ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেলপথের দু’ধারে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এ সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। এমনকি এ সীমানার ভেতর গবাদি পশু চরানো হলে তা বিক্রি করে অর্থ সরকারি কোষাগারে দেয়ারও বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল রেললাইনের উপর কিংবা দু’ধারের ১০ ফুট সীমানার মধ্যে হাঁটাচলা করলে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তার প্রয়োগ তো দূরের কথা খুব কম সংখ্যক মানুষ এ ব্যাপারে জানেন।

সরেজমিন দেখা যায়, তেজগাঁও টু মালিবাগ রেললাইন দিয়ে আইন অমান্য করে গণহারে মানুষ চলাচল করছে। কেউ মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে, কেউ যাচ্ছে কানে হেডফোন লাগিয়ে। অনেকে আবার ট্রেন এলেও তড়িঘড়ি করে রাস্তা পার হচ্ছে। ফলে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এছাড়া মালিবাগ লেভেল ক্রসিং থেকে টঙ্গী ডাইভারসন লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত লাইনের দু’ধারের ১০ ফুটের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। এতে ট্রেন এলে পাশে তেমন একটা দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই।

কারওয়ান বাজারের এফডিসি লেভেল ক্রসিং থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্ত দু’ধারের ১০ ফুটের মধ্যে রয়েছে সুবিশাল বস্তি। এখানে এমনিতেই দুটি লাইনের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৫ ফুট বা তারও কম। আবার বস্তি থাকায় দুটি ট্রেন একসঙ্গে এলেই যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তেজগাঁও টু মালিবাগ রেললাইনে মোট ৩৪ জন ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় সব দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সফিকুল ইসলাম নামে রেললাইন দিয়ে চলাচলকারী এক পথচারী যুগান্তরকে বলেন, ফার্মগেট যাব তো, তাই এখান দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তায় অনেক জ্যাম তাই এখান দিয়ে ১০ মিনিটেই পৌঁছে যাব। আফতাব আলী নামে আরেকজন পথচারী বলেন, রাস্তা থেকে রেললাইনে ধুলাবালি কম, তাই এখান দিয়ে চলাচল করি।

আইনে তো রেললাইনে চলাচল নিষেধ আপনি জানেন কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি জানি না। তেজগাঁও রেলস্টেশন মাস্টার আবদুল আজিজ যুগান্তরকে বলেন, আমার দায়িত্বের এলাকা তেজগাঁও স্টেশন থেকে কারওয়ান বাজারের লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত। আপনি রেলওয়ের প্রশাসন ভবনে গিয়ে পরিবহন কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়ে নিন।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হওয়ার সময় এরই মধ্যে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা দুর্ঘটনারোধে লিফলেট বিলি করেছি, মাইকিং করেছি ও স্টেশনে স্টেশনে মতবিনিময় করেছি। এখনও প্রতিনিয়ত মাইকিং করে যাচ্ছি। -যুগান্তর।



মন্তব্য চালু নেই