রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের অনুমতি নেই

ঢাকা মহানগরীতে ‘সিটিং সার্ভিসে’র কোন অনুমতি দেয় না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবুও রাজধানীতে অসংখ্য যানবাহন ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলাচল করছে।

সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহনের নামে সিটিং সার্ভিসে চলে গণহয়রানি। এ ব্যাপারে যাত্রীদেরকে সহযোগিতা করার কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের নেই। বরং অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের কল্যাণে নয়, বাস মালিকদের আর্থিক স্বার্থের জন্য নিয়োজিত সরকারের সেবা সংস্থাগুলো।

অনুমোদন ছাড়া রাজধানীতে কিভাবে সিটিং সার্ভিস চলে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘নগর পরিবহণ দেখার দায়িত্ব আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটির (মেট্রো আরসিসি)। নগর পরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া, অবৈধ যানবাহন, ফিটনেস বিহীন যানবাহন এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বও তাদের।

মূলত: প্রতিটি নগরীতে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে এই কমিটির মাধ্যমে গণপরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করে বিআরটিএ। কিন্তু নগর কমিটির সঙ্গে বিআরটিএ’র সমন্বয় না থাকায় প্রতিনিয়ত সমস্যা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটিতে যাত্রীদের কোন প্রতিনিধি না থাকায় গণপরিবহনের সমস্যা সমাধানের কথা উচ্চারণ হয় না। ঢাকা মেট্রো আঞ্চলিক কমিটিতে মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা রয়েছেন কিন্তু যাত্রী সমিতির কোন প্রতিনিধি নেই।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা মেট্রো আঞ্চলিক কমিটিতে নাগরিক সমাজের পাঁচ জন প্রতিনিধি রাখার নির্দেশ রয়েছে। সেখানে সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, নারী সমাজ, যাত্রী কল্যাণ সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতির দাপটের মুখে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো আঞ্চলিক কমিটি গঠন করেছে শুধু মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে।’

বিআরটিএ’র অনুমতি না থাকার পরও কীভাবে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চলাচল করছে? এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার পিএস রফিকুল বলেন, ‘স্যার একটু ব্যস্ত রয়েছেন। আর এ বিষয়টি বিভাগীয় আঞ্চলিক অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গণপরিবহনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে বিআরটিএ বরাবর বলে এলেও বাস্তবে তার প্রভাব নেই বললেই চলে।’

রাজধানীতে কীভাবে সিটিং সার্ভিস চালু রয়েছে- এ বিষয়ে নগর আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটির (মেট্রো আরসিসি) উপ-পরিচালক মো. মাকসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ব্যস্ততার কথা বলে মন্তব্য করেননি।

এদিকে সরাকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীতে গণপরিবহনের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। আর মিনিবাসের ভাড়া ১০ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে।

কিন্তু এই নিয়ম মানছে না গণপরিবহনের শ্রমিকরা। ১০ কিলোমিটার অতিক্রম করলে যেখানে এক টাকা ভাড়া বাড়ার কথা। সেখানে প্রতিনিয়ত পাঁচ থেকে আট টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সিটিং সার্ভিসের নামে লোকাল পরিবহণের চেয়ে প্রায় ১০ থেকে ২০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। দেখা যায়, মতিঝিল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর যেতে লোকাল পরিবহণে ১৫ টাকা ভাড়া রাখলেও সিটিংয়ের নামে একই ব্যবধানের ভাড়া ২৫ থেকে ২৮ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি রুস্তুম আলী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চলাচলের অনুমোদন নেই। তবে কিছু কিছু পরিবহণ অবৈধভাবে চালাচ্ছে?’

এক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কি? জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করেননি রুস্তুম আলী খান।



মন্তব্য চালু নেই