রাজধানীতে পার্টটাইম চাকুরীর লোভনীয় বিজ্ঞাপন, প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চোখে পরে চাকরির অসংখ্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন। এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই ছুটে যাচ্ছে ওইসব বিজ্ঞাপন দাতার কাছে। দারিদ্রতা আর সরলতার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এইসব নামধারী প্রতিষ্ঠান গুলো ।

বিশেষ করে রাজধানীতে নতুন আসা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের উৎস খুঁজতে গিয়ে এসব প্রতারণা চক্রের শিকার হচ্ছেন।

কর্মের সংস্থানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানী মুখী হচ্ছে মানুষ। দেশের উন্নত ও উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে খ্যাত রাজধানী ঢাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলেছে । আর এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশীরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। পড়া-শোনার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক চাহিদা মেটাতে তাদের প্রয়োজন পার্টটাইম কোনো কর্মসংস্থানের । তাদের এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রতিনিয়তই পরতে হচ্ছে রাজধানী শহরে নতুন পরিবেশের নানা প্রতারণার ফাঁদে।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে পার্টটাইম চাকরি প্রার্থীদের মনে সুখের হাওয়া বইলেও বাস্তবে চাকরির খোঁজে গিয়ে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় তাদের।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিঃ ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রাইভেট ফিন্যান্স কোম্পানিতে অফিস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পার্ট-টাইম ও ফুল টাইম ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক পুরষ/মহিলা ও ছাত্র-ছাত্রী আবশ্যক। ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করতে পারবে।পদসমূহ: সহকারী ম্যানেজার/ ম্যানেজার/ হিসাবরক্ষক/ রিসিপসনিস্ট। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এসএসসি/ এইচএসসি/ বিবিএ/ এমবিএ/ অনার্স/ মাস্টার্স (অধ্যয়নরত)। পার্টটাইম: সপ্তাহে ৩ দিন ৩ ঘন্টা। ফুল টাইম : সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বেতন/ভাতাদি: আলোচনা সাপেক্ষে। অভিজ্ঞতা ও জামানতের দরকার নেই। আগ্রহী প্রার্থীদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সরাসরি অফিস : বড় করে লেখা মোবাইল নম্বর ০১৯৩৫৯৯২১৯৫। বি.দ্র. ছাত্র/ছাত্রীদের পার্ট টাইমের সু-ব্যাবস্থা আছে। শ্যামলী (রিংরোড), ঢাকা-১২০৭।’

এ ধরনের একটি বিজ্ঞাপনে মোবাইল নম্বর দেখে চাকরির জন্য যোগাযোগ করা হলে মাসুদ নামের একজন জানান,তাদের অফিস শ্যামলীতে। তাদের অফিসে চাকরির সুযোগ আছে। তিন দিন পর শ্যামলী গিয়ে আবার ফোন করার কথা বলেন।

আরেকটি বিজ্ঞাপনঃ ‘পার্টটাইম চাকরি’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গ্রুপ অব কোম্পানিতে সম্পূর্ণ অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছুসংখ্যক পুরষ/মহিলা, ছাত্র/ছাত্রী আবশ্যক। সপ্তাহে তিন দিন, তিন ঘণ্টা। বেতন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। ছাত্র/ছাত্রীদের অগ্রাধিকার। তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা মালিবাগে যেতে বলেন।

এ ধরনের চাকরি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত এভাবে কেউই চাকরি পান না এবং কিছু অর্থ খরচ করার পর খালি হাতে তাদের ফিরে আসতে হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাবিব আহসান জানান, রাস্তার দেয়ালে খন্ডকালীন চাকরির একটি বিজ্ঞাপনে শুধু মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। গত ডিসেম্বর মাসে যোগাযোগ করলে ফার্মগেটের মালেক টাওয়ারের নবম তলায় গিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নামফলক পাননি। অভ্যর্থনা কক্ষে থাকা একজন তাকে জানান, তিনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। এরপর একজন নিজেকে বাদশা পরিচয় দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিতে বলেন। টিকলে তবেই চাকরি। বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা। সাক্ষাৎকারের পর নির্বাচিত হলেন। কী চাকরি জানতে চাইলে তাকে জানানো হলো, গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলা ও সদস্য বাড়ানো। আর এ জন্য বেশ কিছু বিজ্ঞাপন নগরের বিভিন্ন জায়গায় লাগাতে হবে। অফিসে সময় দিতে হবে সপ্তাহে তিন দিন তিন ঘণ্টা করে। তবে এর আগে পাঁচশ’ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তখন হাবিব আহসান প্রতারণা বুঝতে পেরে সেখান থেকে ফিরে আসেন।

তিনি টাকা না দিলেও অনেকেই টাকা দিয়ে আসেন চাকরি পাওয়ার আশায়। একইভাবে প্রতারিত ফারিহা জানান, সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর দুই দিনের প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয় আমাকে। তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন তারা বলে, আড়াইশ’ টাকা দিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। টাকা দেওয়ার পর বলা হয়, ছয় হাজার টাকা দিয়ে নিজের একটি বীমা করতে হবে। বেতন থেকে এ অর্থ কেটে রাখার কথা বললে তারা জানিয়ে দেয়, টাকা না দিলে কোনো চাকরি হবে না। এরপর আমি চলে আসি।’

বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে দেখা যায়, সবই প্রায় একই ধাঁচের। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ‘জামানত নিষ্প্রয়োজন’ বা বেতনের পরিমাণও উল্লেখ থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয় না ও যোগাযোগের ঠিকানাও দেওয়া হয় না। থাকে কেবল একটিমাত্র মোবাইল নম্বর।

এ বিষয়ে রাজধানীর কয়েকটি থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঝে-মধ্যে তাদের কাছে চাকরিতে প্রতারনার অভিযোগ আসে। কেউ কেউ সাধারণ ডায়েরি করেন। এভাবেই নগরীতে চাকরি বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা চললেও সে বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই।



মন্তব্য চালু নেই