রাখাল বালক, ছবি এঁকেই ইউরোপ যাবেন, মুখোমুখি হবেন মোনালিসার

মহারাষ্ট্রের এক ছোট্ট গ্রাম। গুগুল মামাও তেমন একটা ওই গ্রাম সম্পর্কে জানেন না। মহারাষ্ট্রের ওই আদিবাসী গ্রামের এক গরিব পরিবারের ছেলে আনন্দ ওয়ালদে। রাখাল বালক আনন্দ মেষ পালনে পটু।

আর তেমনি পটু ছড়ি চালাতেও। মহিষের দলকে যখন ঘাটে নাইতে নিয়ে যায় সে, তখন তাঁদের পিঠে ছড়ি চালায় আনন্দ। তেমনই ছড়ি ঘোরায় ক্যানভাসে। তুলি কেনার পয়সা নেই, রঙ কেনার টাকা নেই, কিন্তু শিল্পী আনন্দ বিরাট ধনী, তার ভাবনাও বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী। ছবিতে আনন্দ আঁকলেন মহিষদলের ইতিকথা। “মহিষকে দুমরে মুচরে, একটা আকার দিয়েছি”, নিজের ভাবনার বিবর্তনকে বর্ণনা করতে গিয়ে এমনটাই বললেন আনন্দ ওয়ালদে।

আনন্দের ভাই দীপকও ভালো ছবি আঁকেন। ৪ সদস্যের হতদরিদ্র পরিবারে দুই ভাই শিল্পী হলে শিল্প হবে ঠিকই কিন্তু পেট চলবে না, তাই দাদা আনন্দের জন্য আত্মত্যাগ করলেন ছোট্ট ভাই দীপক। আর আনন্দও যেন হয়ে উঠলেন দুইয়ের এক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দুই বন্ধু, গ্যারি সোবার্স ও কলি স্মিথ। উঠতি তারকা যেভাবে বল উড়িয়ে উড়িয়ে মাঠের বাইরে মারতেন চোখ ধাঁধিয়ে যেত অনেকেরই। হঠাৎ একদিন অঘটন।

প্রচণ্ড নেশা আর গতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনা। সোবার্স বাঁচলেন আর কলি শায়িত হলেন কফিনে। সোবার্সের মন ভেঙে গেল। ২২ গজেই ফিরবেন না ঠিক করলেন, সবসময় অনুশোচনা হত সোবার্সের, ‘হত্যার দায়’ নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু সম্বিত ফিরল একদিন। ফিরলেন ২২ গজে, আর প্রতিটা রান করার সময় এটাই ভাবলেন, সোবার্সের প্রতিটা রানের জন্য দৌঁড়াচ্ছেন কলিও।

মহারাষ্ট্রের আনন্দও তো তাই। ভাইয়ের আত্মত্যাগ। রাখাল ছেলে ছড়ি না ঘুরিয়ে ছবি আঁকছেন, নিজের জন্য তো অবশ্যই, তার সঙ্গে ক্যানভাসে যেন হাত বুলিয়ে দেয় ভাই দীপকও।

মহারাষ্ট্রের ওই ছোট্ট গ্রাম থেকে ও এবার সফর করবে ইউরোপের পথে, স্বপ্নটা এমনই। প্যারিস, ভেনিস, রোমের স্থাপত্য দেখবে, ঘুরবে মিউজিয়াম, মুখোমুখি দাঁড়াবে মোনালিসার। স্বপ্ন সত্যিই ভীষণ বড়। আর আনন্দের এই স্বপ্নে পাখনা ক্যামেল আর্ট ফাউন্ডেশন। ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ৮ সফর করবে ইউরোপে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাছাই করা সেরার সেরারা যাবেন ইউরোপে।

সেরাদের তালিকায় আছেন আনন্দও। ১ লক্ষের পুরস্কার আর ট্রফি জিতে সেরাদের তালিকায় আছেন বাংলারও দুই শিল্পী। কলকাতার তাপস দাস আর তমলুকের তরুণের ছবি দেখে অভিভূত শিল্পী ওয়াসিম কাপুর, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তি, সাহিত্যিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্যও।

বেনুদা ICCR-এর এই শিল্প কর্মশালায় ১৬ জন প্রতিযোগীদের ছবি দেখে নিজের ছোটবেলার কথাই তুলে ধরলেন শিল্পীদের কাছে। সব্যসাচী চক্রবর্তি বললেন, “আমি আবার আঁকা শুরু করব। ছোটবেলায় ছবি আঁকতাম, কিন্তু আমার কর্মজীবনের ব্যস্ততা আমাকে আমার ছবি আঁকা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এই ১৬ আমাকে আবার অনুপ্রাণিত করলেন। আমি আবার ছবি আঁকব”।

চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুরের কথায়, “শিল্পের মক্কা কলকাতায় ক্যামেল আর্ট ফাউন্ডেশন যে ধরনের চিত্র প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা আমাকে দিল, তা এককথায় অবিশ্বাস্য”। পিকাসোর মোনালিসার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সাহিত্যিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের অভিজ্ঞতা, “দেওয়ালে মোনালিসা দাঁড়িয়ে, ঘুরে বেরাচ্ছি আমি, যেদিক থেকেই দেখছি, যেভাবেই দেখছি, মনে হচ্ছে একটা গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে আলোর বিচ্ছুরণ”।

শ্রেষ্ঠ ১৬ জনের মধ্যে সালোনি আর মধুরার কথা না বললে প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এক আদ্য প্রান্ত কর্পোরেট, পুনের সালোনি একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মী। ছবির ভাষায় ও ‘অ্যামেচার’, তবে সুন্দরী ছবিটা এঁকেছেন খুব সুন্দর। পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় আছে সালোনিও।

আর অন্যজন মধুরা। তুলিতে মধুরার রঙের ছোঁয়া মধুর থেকেও মধুর, চোখে শান্তির পরশ আর মনে প্রশান্তি দুই এনে দেয়। আর এই গোটা কর্মযোগ্য যাদের মস্তিষ্ক থেকে ভূমিষ্ঠ, তাঁরা ক্যামলিন কোকিও।

Camlin_Exhibition_1

সুত্র: ২৪ঘন্টা



মন্তব্য চালু নেই