রাখাইনের অনেক গ্রাম এখনো বিরানভূমি

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন এস্টেটে গত অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। এ অভিযান শুরু হয় ৯ অক্টোবর ৯জন বিজিপি সদস্যকে হত্যার পর। ওই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাখাইন অঞ্চলের গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং ওসব গ্রামের বাসিন্দারা এখনো ফিরে আসেনি।

রাখাইনের গ্রামগুলো থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে গত নভেম্বর থেকে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এ খবর নিশ্চিত করেছে। সেনাবাহিনীর ওই অভিযান ছিল সন্দেহজনক সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা। অন্তত ৫’শ সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা মুসলমানকে গ্রেফতারের পর তাদের অনেকেই সেনাবাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলে মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

অভিযান শুরুর পর রাখাইন অঞ্চল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাহিরাগতদের সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর মিয়ানমার সরকার ১৩ সদস্যের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠায়। মিয়ানমারের খিই কান পিইন সীমান্ত এলাকা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরা সান লুইন নিশ্চিত করেছেন রাখাইন অঞ্চল থেকে পালিয়ে যাওয়াদের অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম। এবং তারা এখনো ফিরে আসেনি। তিনি এও জানান, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা মিলে রাখাইন অঞ্চলের গ্রামগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। ৯০৫টি গ্রামের মধ্যে সাড়ে ৪’শ গ্রামের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দারা ফিরে আসেনি। গ্রাম প্রধানরা বলছেন, মংডু জেলার হাজার হাজার বাসিন্দাদের এখনো কোনো খোঁজ মিলছে না। নাগাখুরা গ্রামের ৭০ বছর বয়সী উ খু লু মিয়ার মিয়ানমার টাইমসকে বলেন, ৯ অক্টোবরের পর থেকে অন্তত হাজার খানেক মানুষ পালিয়ে গেছে এবং তারা কোথায় গেছে তা তিনি জানেন না। তাদের অধিকাংশই নারী এবং আতঙ্কে তারা আর ফিরছেন না।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১৫’শ ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।

রাখাইন এস্টেট ইনভেস্টিগেশন কমিশনের সদস্যরা মংডু সফর করে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও সম্পদের একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। প্রশাসন বলছে এ পর্যন্ত ৭৬৮টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোয়েড্যানগু গ্রামের ইমিগ্রেশন অফিসার উ ফোন নাইং মিয়ানমার টাইমসকে বলেন, এখনো ৯০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামবাসিন্দাদের অনেকে বলেন, নিখোঁজ অনেকেই মংডুতে চিকিৎসার জন্যে গিয়েছেন। এখনো ফেরেননি। নিখোঁজদের অধিকাংশ পুরুষ।

মংডু জেলার প্রশাসন বলছে, গ্রামবাসিদের ফিরে এসে বাড়ি ঘরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বলা হয়েছে। তারা বলছেন, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। ব্রিগেডিয়ার থুরা সান মিয়ানমার টাইমসকে জানান, গ্রেফতারকৃত ৫৫৭ জনকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ৪২ জনের বিচার সম্পন্ন হওয়ার পর ২৩ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অধিকাংশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে।

রাখাইন অঞ্চলে এখনো ত্রাণ তৎপরতা নিষিদ্ধ। জাতিসংঘ এর আগে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে রেশনে খাদ্য সরবরাহ করত। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও রাখান এস্টেট এ্যাডভাইজারি কমিশনের প্রধান কফি আনান মিয়ানমার সফর করে বলেছেন, শীঘ্রই রাখাইন অঞ্চলে সাংবাদিকদের সফর ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা সম্ভব হবে।

মিয়ানমার টাইমস’এর সাংবাদিক নিয়ান লিন অং’এর প্রতিবেদকের অনুবাদ



মন্তব্য চালু নেই