রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ড

হাজারো বৈচিত্র্যের দেশ ভারত। নানান ভাষার এবং সংস্কৃতির মানুষের সম্মিলিত বসবাস ভারতকে অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে করেছে স্বতন্ত্র। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর পটপরিবর্তন গোটা ভারতবর্ষকে ভেঙ্গে তিন টুকরো করলেও এখনও বিশাল ভূখণ্ড নিয়ে ভারত বিশ্বমানচিত্রে আলাদা সৌন্দর্যের দাবিদার। দেশটির একদিকে যেমন আছে উষর মরুভূমি, তেমনি অন্যদিকে আছে বরফাচ্ছন্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভারতকে নিয়ে প্রাচীন পৃথিবীতে রহস্যের অন্ত ছিল না। যেমন ককেশিয় অঞ্চলের মানুষদের কাছে ভারত ছিল তান্ত্রিকদের পূণ্য ভূমি। আবার ইউরোপবাসীর কাছে ভারত ছিল জঙ্গলাকীর্ণ এক অঞ্চল যেখানে বুনো মানুষের বসবাস। কিন্তু যুগের হাওয়ায় এসব রহস্য এখন আর হালে পানি পায় না। এখন ভারতের সঙ্গে বিশ্বের সবগুলো উন্নত দেশের রয়েছে বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক সংযোগ। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমন করতে আসছেন। কিন্তু তারপরেও, ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলকে ঘিরে মানুষের মাঝে আজও রহস্য ঘুরপাক খায়। তেমনি একটি অঞ্চল হলো হিমালয়ের রূপকুণ্ড হ্রদ।
2 রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ডএই হ্রদটিকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই যেন। আর এই রহস্যময়তা যত দিন পেরিয়েছে ততই ঘণীভূত হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। কোথাও শুনতে পাওয়া যায় যে, এই হ্রদে এমনও কিছু স্থান আছে যেখান থেকে মানুষ আর কখনও ফিরে আসে না। আবার এমনও শোনা যায় যে, এই হ্রদের পানিতে গোসল করতে পারলে সকল পাপ তো দূর হবেই পাশাপাশি অমরত্বও মিলতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটাই এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ২৯ মিটার উঁচুতে এই হ্রদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণের পক্ষে ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও এই হ্রদে যাওয়া সম্ভব নয়।
3 রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ডস্থানীয়দের কাছে রূপকুণ্ড হ্রদটি ‘কঙ্কাল হ্রদ’ নামেও পরিচিত। অবশ্য এই নামের পেছনেও কিছু কারণ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উত্তরাখণ্ডের এই এলাকার বরফের তলা থেকে প্রায় ৬০০টি কঙ্কাল পাওয়া যায়। কিন্তু কিভাবে এই হ্রদের কাছাকাছি এতোগুলো কঙ্কাল আসলো তার কোনো কিনারা এখনও হয়নি। আর এই রহস্য সুরাহা না হওয়ার কারণে স্থানীয়রা একে ঐশ্বরিক বলেও দাবি করছেন। কিন্তু এই হ্রদের সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য হলো, বছরের সবসময় এই হ্রদটিকে দেখা যায় না। অনেক পর্যটক এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ মানচিত্র ঘেটে এবং বছরের পর বছর অনুসন্ধান চালিয়েও হ্রদটির সন্ধান পায়নি। আবার এমনও হয়েছে যে, অল্প একটু চেষ্টাতেই অনেকে দেখতে পেয়েছেন হ্রদটিকে। আর তাইতো স্থানীয়রাও বলেন, যারা পূণ্যবান তারাই কেবল এই হ্রদটির দেখা পান।
4 রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ডভারতীয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ ঘেটে দেখা যায়, রূপকুণ্ড হ্রদটিকে কেন্দ্র করে খিস্ট্রের জন্মেরও আগে থেকেই রহস্য চালু ছিল। তখন অনেক মুনি আর ঋষির নামে বিভিন্ন গল্প চালু ছিল হ্রদটিকে কেন্দ্র করে। তবে ১৯৪২ সালের দিকে একজন বনরক্ষী প্রায় আচমকাই হ্রদটি আবিস্কার করেন এবং অনেক গণকবর আবিস্কার করেন। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে জানা যায়, এই কঙ্গালগুলো ১২ থেকে ১৫ শতকের সময়কার।
1 রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ড
কিন্তু মানুষের মনে আজও ভাবনা ঘুরপাক খায় এই ভেবে যে, কেন ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে সেই নয় শতকের সময়ে একসঙ্গে এতগুলো মানুষের কবর দেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা কঙ্কালগুলো এবং প্রাপ্ত গহনা পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন যে এগুলো কোনো রাজকীয় বাহিনী বা একদল তীর্থযাত্রীর। এমনও হতে পারে যে এই মানুষগুলো কোনো তীব্র তুষারঝড়ের কবলে মারা গিয়েছিল। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যটি হাজির করেন একদল নৃতত্ত্ববিদ। তাদের ভাষ্যমতে, ওই অঞ্চলে বসবাসরত কোনো গোষ্ঠি গণহারে আত্মহত্যা করেছিলেন।
5 রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ডযাই হোক না কেন, রূপকুণ্ড হ্রদ আজও রহস্যের চাদরে মোড়া। যতদিন যাচ্ছে ততই আরও দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছে হ্রদটি। দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক এই হ্রদটি দেখার জন্য প্রতিবছর ভিড় করেন। যাদের রয়েছে পর্যাপ্ত সাহস এবং শারীরিক শক্তি তাদেরই উচিত এই হ্রদ অনুসন্ধানে যাওয়া। কারণ প্রকৃতির অপার রূপ দেখতেও যে প্রচণ্ড শক্তির প্রয়োজন হয় তার সাক্ষীতো খোদ হিমালয়।

রহস্যময় হ্রদ রূপকুণ্ড



মন্তব্য চালু নেই