রমনা বোমা হামলা: ১৬ বছর পরেও হয়নি চূড়ান্ত রায়

রমনার বটমূলে ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলা দীর্ঘ ১৬ বছরেও চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। দুই বছর আগে এ হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণা করা হলেও চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়নি উচ্চ আদালতে।

এছাড়া এ ঘটনায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি বিচারিক আদালতে কবে নাগাদ শেষ হবে, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

উচ্চ আদালতের কর্তৃপক্ষ ও মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, রমনার বটমূলে ঘটে যাওয়া বোমো হামলার মামলাটি ১৪ বছর পর বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ও যাবজীবনপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে অপেক্ষমাণ রয়েছে। জানা গেছে, আগামী মাসে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, নিম্ন আদালতের রায় ও মামলার নথিপত্রসহ ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছার পর রায়ের পেপারবুক তৈরির কাজ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ মামলাটি বিচারপতি হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। আগামী মাসে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে, বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে চলছে। এ মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি ৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন।

এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও মাওলানা শফিকুর রহমান।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা আবু তাহের। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৮ জনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদেরও একই অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের অতিরিক্ত এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

মামলায় মোট ১৪ জন আসামির মধ্যে ৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন-

মুফতি আবদুল হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও মাওলানা আকবর হোসাইন।

পলাতক আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আবু বকর, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে একজন মারা যান। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওইদিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই