রনির গোলে বাংলাদেশের জয়

নেপালের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ভারতের কেরালায় শুরু হবে সাফ ফুটবল। এর প্রস্তুতি হিসেবেই এ প্রীতি ম্যাচ খেলছে দুই দল। দুই দেশের কোচ মারুফুল এবং প্যাট্রিক অসেমসের অভিষেক ম্যাচ ছিল এটি। তারা নতুন যোগ দিয়েছেন নিজ নিজ দলের সঙ্গে। নেপালের এই দলটি তারুণ্য নির্ভর। কিছুদিন আগে পাতানো ম্যাচ খেলার অভিযোগে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচজন খেলোয়াড়কে বহিস্কার করেছে এএফসি।

এদিন মাঝমাঠে জামাল ভুঁইয়ার জায়গায় হেমন্তকে রেখে শুরু করেন বাংলাদেশের কোচ মারুফুল হক। জামালের ইনজুরি। শুরুতে কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল নেন লোপেজের বদলে দায়িত্ব পাওয়া দেশি কোচ মারুফুল। তবে মিনিট পনেরো বাদে আক্রমণে শক্তি বাড়াতে থাকে তার ছেলেরা। ফলও আসে। ১৮তম মিনিটে সাখাওয়াত রনির গোলে এগিয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

১৭তম মিনিটে প্রথম সেট পিস পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সরাসরি না মেরে ছোটো পাসে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করেন মামুনুল। ফিরতি পাসে মামুনুল বল নিয়ে কিছুটা নিচে নেমে আসেন। হেমন্তর পা হয়ে বল যায় ডিবক্সের বাঁ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়ামিন মুন্নার পায়ে। কোমর ভেজিয়ে দারুণ এক চিপে তিনি বল তুলে দেন নেপালের বক্সে। আগুয়ান সাখাওয়াত হোসেন রনি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন।

২৬তম মিনিটে নেপালি অধিনায়ক অনিল একটা সুযোগ নষ্ট করেন। বক্সের দারুণ জায়গায় ভাসানো বলে ঠিকমতো মাথা লাগাতে পারলে বিপদে পড়তো বাংলাদেশ। ২৯তম মিনিটে আরেকটি চেষ্টা মাটি হয় ওই অনিলের। ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুঁকে পড়েন তিনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে বল দ্বিতীয় বারে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ডাইভ দিয়ে দারুণ ভঙ্গিমায় তা গ্রিপ করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। এদিন নিয়মিত গোলরক্ষক সোহেল একাদশে ছিলেন না। তার জায়াগায় বার সামলান রানা।

প্রথমার্ধে সময় যত বাড়তে থাকে, বাংলাদেশের মাঝমাঠ ততই গুছিয়ে ওঠে। হেমন্ত, মামুনুল, মিশুদের সঙ্গে বেশ ভালই বোঝাপড়া গড়ে তোলেন মুন্নারা।

৪০তম মিনিটে ফিরতি আক্রমণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন হেমন্ত। মাঝমাঠের কিছুটা ওপর থেকে তাকে বল দেন মামুনুল। হেমন্তর পাশে ছিলেন একজন ডিফেন্ডার। আর সামনে কেবল গোলরক্ষক। বল এক ড্রপের পর হেমন্তর বুকের কাছে আসে। হেমন্ত পা বাড়িয়ে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই ধরনের বলে জোর না খাটিয়ে শুধু প্লেসিং করতে হয়। কিন্তু হেমন্ত একটু জোরের সঙ্গে পা লাগান। তাতেই বল যায় বারের বেশ উপর দিয়ে।

৪২তম মিনিটে মামুনুলের দূরপাল্লার একটি শট বারের কিছুটা উপর দিয়ে যায়। এভাবে প্রথমার্ধের শেষ দিকে আক্রমণে বেশ গতি বাড়ায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দুই দলের কোচই সাইডবেঞ্চ ঝালিয়ে নিতে চারটি করে পরিবর্তন করেন। প্রীতিম্যাচ তাই পরিবর্তনের সংখ্যাটা বেশি। এসময় বেশ ছড়িয়ে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ভালো আক্রমণ গড়ে না উঠলেও খেলার ছন্দ ছিল। ৫৪ মিনিটে বক্সের ডান কোনার ঠিক কিছুটা বাইরে থেকে বাঁ পায়ে সেট পিস নেন মামুনুল। বাঁকানো শটে বল রাখেন নেপালের বক্সে। ভিড়ের ভেতর থেকে ইয়াসিন খান বল জালেও জড়ান। কিন্তু রেফারি অফসাইডের কারণে গোল বাতিল করেন।

৬১তম মিনিটে রোহিত চাঁদ ২৫ গজ দূর থেকে পরীক্ষায় ফেলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রানাকে। বল নিয়ে সামনে যেতে যেতে হঠাৎ গোলে শট নেন। অল্পের জন্য বারের দেখা পায়নি চাঁদের বিদ্যুত গতির এই শট। ৬৫তম মিনিটের দিকে হাইলাইন ডিফেন্স খেলতে থাকে নেপাল। মাঝমাঠের শক্তি বাড়িয়ে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। ৭৫তম মিনিটে গোলপোস্ট হতাশ করে নেপালকে। বাংলাদেশের বক্সের ঠিক সামনে থেকে ডান পায়ে শট নেন ওই রোহিত চাঁদ। ভাগ্য আরেকটু ভাল হলে সমতায় ফিরতে পারত তারা। ৭০ মিনিটের ভেতর নেপাল আরো দুইটা পরিবর্তন এনে খেলায় বেশ গতি আনে। বাংলাদেশের অর্ধে বারবার বল নিয়ে ঢুকছিলেন দলটির মিডফিল্ডাররা। এসময় বাংলাদেশের দুই উইংয়ের সঙ্গে ডিফেন্সিভ মিডের যোগাযোগটা কমে যায়। তাতে কিছুটা চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। ওদিকে আক্রমণভাগে রনি একা একা তেমন কিছু করতে পারছিলেন না। তিনি এক গোল করে ইনজুরি আক্রান্ত এমিলির অভাব মেটালেও বলে যেতে পেরেছেন খুব কম সময়ের জন্য।

৮০তম মিনিটের পরে প্লান ‘বি’র দিকে যান কোচ মারুফুল। স্টপার ব্যাকদের একটু উপরে উঠিয়ে মাঝমাঠ আর আক্রমণভাগে যোগাযোগ বাড়ান। ৮২তম মিনিটে সোহেল রানার পরিবর্তে মাঠে আসেন ফরওয়ার্ড জীবন। তাতে কিছুটা চাপ কমে বাংলাদেশের ডিফেন্সে। তবে মারুফুলের চিন্তা কমছে না তাতে। কেননা এই প্রস্তুতি থেকে স্পষ্ট বোঝা গেছে সাফে সেরা হতে হলে খেলার মান বাড়াতে হবে এমিলিদের। মামুনুলরা কি পারবেন?



মন্তব্য চালু নেই