রংপুর রণক্ষেত্র, দফায় দফায় সংঘর্ষ, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ২ মামলা

চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসময় বেশ কিছু দোকানে আগুন দেয়া হয়। সংঘর্ষের পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। স্থগিত করা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, রাত নয়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষ চালাকালে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

পুলিশ জানায়, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা তাণ্ডবে পাঁচ পুলিশ ও চার সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রংপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।

একটি মামলা করেছেন লিফা ফাস্টফুড অ্যান্ড কনফেকশনারীর মালিক মাজেদুল ইসলাম লাভলু। আরেকটি মামলা করেছেন পার্কমোড় ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক এসএম মাসুদ রানা।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের দাবি করা এক লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড়ে অবস্থিত লিফা ফাস্ট ফুড এন্ড কনফেকশনারীতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এর প্রতিবাদে বিকালে সমাবেশ ডাকেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময় পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। সংঘর্ষ চালাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা পার্কমোড়ের ফুটপাতের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।

সংঘর্ষের সময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে, পুলিশের দাবি অ্যাকশনে না গিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এখন সংঘর্ষ বন্ধ থাকলেও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর মীর তামান্না ছিদ্দিকার সাথে কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলতে গেলে তার সাথে থাকা কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, তার ছেলেদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, কয়েক দফায় ছাত্রলীগ কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পার্ক মোড়ের ফুটপাতের বেশ ক’টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করলেও প্রক্টর দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ এ সংঘর্ষে জড়ায়নি।

তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নতুলে বলেন, আমরা তাদের আরো সক্রিয় হবার আশা করেছিলাম। কারণ বহিরাগতরা কয়েক দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে হামলা চালিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫/ ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল রহমান সাইফ জানান, আমরা অ্যাকশনে না গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবু যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্তি পুলিশ সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।

রংপুরে সংঘর্ষের এই খবর ঢাকায় পৌঁছার পর পর ব্যবস্থা নেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বাতিল করা হয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কার্যক্রম মেনে নেয়া হবে না। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’

পরে রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন- ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র শেখর মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জসিম উদ্দিন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ। এই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।



মন্তব্য চালু নেই