রংপুরে এই ডিমের হালি ৮০০ টাকা, এলাকায় চাঞ্চল্য

অবিশাস্য হলেও এটাই সত্যি। ৮শ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম। তবে এ ডিম মুরগি বা হাঁসের না। এটা রংপুর নগরীর জলকর এলাকায় কলেজছাত্র আব্দুর রহমান সৌরভের গড়ে তোলা খামারের টার্কি মুরগির ডিমের দাম।

এছাড়াও খামারে উৎপাদিত ডিম এবং বাচ্চা ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের বশে স্বল্প পরিসরে শুরু করেছিলেন টার্কি বার্ডের খামার। এখন খরচ ওঠার পর প্রতিমাসে ডিম এবং টার্কি বিক্রি করে আয় করছেন রংপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র সৌরভ।

খেতে সুম্বাদু টার্কি মুরগির মাংসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক ভাবে টার্কির খামার গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তিনি।

সৌরভ জানান, প্রথমে ফেসবুকে টার্কি মুরগি সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে ঢাকা, নওগাঁ এবং সিলেটে গড়ে ওঠা টার্কি খামারে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিলেট থেকে ১৭টি টার্কি মুরগি কিনে এনে খামার শুরু করেন।

দুই মাস বয়সের প্রতিটি টার্কি কিনেছেন ২ হাজার টাকা করে। টার্কিগুলোর মধ্যে মুরগি ৯টি এবং মোরগ ছিল ৮টি। ৬ থেকে ৭ মাস বয়সে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে। দেশি মুরগির মতো ১৫ থেকে ২০টি ডিম দেওয়ার কিছুদিন পর আবার ডিম দেয়ার কথা থাকলেও গত কুরবানি ঈদের পর থেকে তিনি প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি করে ডিম পাচ্ছেন।

সৌরভ বলেন, ৯টি স্ত্রী টার্কির জন্য সমান সংখ্যক পুরুষ টার্কির দরকার নেই। সংখ্যায় বেশি হলে পুরুষ টার্কি অধিকাংশ সময় মারামারিতে লিপ্ত হয়। তাই দুটি পুরুষ টার্কি রেখে বাকি গুলো বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টার্কি বিক্রি করেছেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। সাধারণ মুরগির মত রোগ বালাই হলেও টার্কির খামার করার পর তেমন বড় ধরনের কোনো অসুখ দেখা দেয়নি।

তিনি দাবি করেন, টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই প্রবল। ৬ মাসে একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয়েছে ৫ থেকে ৬ কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন হয়েছে ৩ থেকে ৪ কেজি। বেশ কিছু বাচ্চা বিক্রির পরও বর্তমানে তার খামারে টার্কির সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে বাচ্চা আছে ৩০টি।

এছাড়াও বর্তমানে বেশ কিছু দেশি মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা করেছেন। এক মাস বয়সের একা জোড়া বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫শ টাকায় এবং প্রতিটি ডিম বিক্রি করছেন ২শ টাকা করে।

তিনি বলেন, তার খামারে উৎপাদিত ডিম ইতোমধ্যে নিজ এলাকা ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ থেকে এসেও কিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খামার শুরুর সময় ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও টার্কি মুরগি এবং ডিম বিক্রি করে সে টাকা উঠে এসেছে। তিনিই প্রথম ‘রংপুর টার্কি ফার্ম’ নামে বাণিজ্যিকভাবে এ খামার করেছেন।

সৌরভ বলেন, টার্কির মাংসের সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তাই উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় টার্কি মুরগিপালন করা অনেক লাভজনক। খাবার বলতে ঘাস হচ্ছে টার্কির প্রধান খাবার। এছাড়া পাতা কপি, কচুরিপনা এবং দানাদারযুক্ত খাবার হচ্ছে টার্কির খাবার। তাই যে কেউ অনায়াসে টার্কি পালন করে লাভবান হতে পারেন।

উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, একটি পুরুষ টার্কি ৬ মাসে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যদি ৩শ টাকা কেজি ধরা হয় তাহলে ৬ কেজি ওজনের একটি টার্কির মূল্য হচ্ছে ১ হাজার ৮শ টাকা। এর জন্য খরচ সর্বসাকূল্যে ৫শ টাকার বেশি হবে না। অন্যদিকে ৬ মাসে গরুর খামারে ওই সময়ে শুধু খরচই হবে কিন্তু তেমন লাভ সম্ভব নয়।

বর্তমানে তিনি ১শ ডিমপাড়া টার্কির খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য এক ব্যাচে ৫শ বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ইনকিউবেটর মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।

তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভারত থেকে নিম্নমানের টার্কির বাচ্চা নিয়ে আসছে একটি প্রতারক চক্র। কম টাকায় বাচ্চাগুলো বিক্রি করায় সহজে ক্রেতা আকৃষ্ট হচ্ছেন। কিন্তু এ গুলোর মান খুবই খারাপ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে। কিন্তু সহজে নিম্নমানের বাচ্চা চেনার কোনো উপায় না থাকায় তিনি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বাচ্চা সংগ্রহের পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে আলাপকালে রংপুরের হাঁস মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক ডা. জিতেন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, টার্কি হচ্ছে পাখি প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত। এখনো আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে এর প্রচরণ শুরু হয়নি। তবে এর মাংস খুবই সুস্বাদু। অল্প খরচে টার্কি পালন সম্ভব হয় বলে খামারিরা সহজে লাভবান হতে পারেন। -জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই