যৌন নির্যাতনে কি নারীর পোশাকই দায়ী ?

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হবার ঘটনার পেছনে তাদের পোশাককে দায়ী করার চেষ্টা করে পুরুষতান্ত্রিক অবদমন ও নিপীড়নের সংস্কৃতির পক্ষের লোকেরা। বিবিসি সংলাপে এ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় একজন দর্শক জানতে চান, যৌন সহিংসতার জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করার সংস্কৃতির শেষ কোথায়?

উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, নারী কোন ধরনের পোশাক পড়বে সেটি একান্তভাবেই নারীর নিজের সিদ্ধান্ত।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীও নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য যারা পোশাককে দায়ী করছেন তাদের মানসিকতার সমালোচনা করেন।

সংলাপে অংশ নেয়া আলোচক এবং দর্শকদের বেশিরভাগই মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এমন ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, এ ধরনের ঘটনার বিচার হয় না বলেই বারবার এসব ঘটছে। নৈতিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি অনেকে এ ধরনের অপরাধ করেও মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার মতে সব রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত। ‘এটা একটা জঘন্য অপরাধ ।

অথচ প্রথমে দেখেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলো। এগুলো খতিয়ে দেখার তো কিছু নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একি ঘটনা ঘটলো। যাদের কোমরে জোর আছে তারা এগুলো করে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বলেন তিনি।

একইভাবে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয়ী বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বা বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি মন্তব্য করেন, বিষয়টি বেশিদূর অগ্রসর হবে না। পূর্নাঙ্গ তদন্ত না করে ‘বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য দেয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এতো মানুষের সামনে সম্ভব এটা করা ? এ যে প্রতিবাদ না করার সংস্কৃতি সেটা নেতিবাচক রাজনীতি, আতঙ্ক ও মত প্রকাশের অধিকার বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সবার মধ্যে ঢুকে গেছে। কেউ নারীর কাপড় খুলছে তাকে বাধা দিবো? তাহলে পুলিশ উল্টো আমাকেই ধরবে। বিচার চাইতে গেলে যে বিচার চায় উল্টো তারই বিচার হয়।’

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে, সরকারের তরফে গওহর রিজভী আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করেন, ওই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সরকার ছাড়বে না কারণ ওই দিন যা ঘটেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘তবে তদন্তসহ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিকদেরও এ জাতীয় ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এ ধরনের একটা দুর্ঘটনা এতো লোকের সামনে হয়ে গেলো। পুলিশের কর্তব্য ছিল ঠেকানো। কিন্তু আমরা নাগরিকরা কি করেছি। দয়া করে বিশ্বাস রাখুন, ধৈর্য ধরুন, এ সরকার এ ঘটনার বিচার করবেই।’

তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বলেন, নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঘরে ঘরে নারীদেরকেই পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি মনে করেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিশ্চিত করতে হবে নারীর স্বাধীনতা আর ক্ষমতায়ন, রুখতে হবে পুরুষতন্ত্র।

ইনাম আহমেদ চৌধুরীও নারী লাঞ্ছনার জন্য যারা পোশাককে দায়ী করছেন তাদের মানসিকতার সমালোচনা করেন।



মন্তব্য চালু নেই