যে ৭ কারণে সুজাতাকে অপসারণ করলো মোদি সরকার

গত ২৮ জানুয়ারি হঠাৎ করে মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংকে। বৃহস্পতিবার সকালে নতুন পররাষ্ট্রসচিব হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করা এস জয়শঙ্কর। এ অপসারণে সুজাতা সিং ভারত সরকারকে দায়ী করলেও টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেছে, কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

১. পররাষ্ট্রনীতি

গত ছয়মাস ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট মোদি প্রশাসন, বিশেষ করে সদ্যসাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের নেতৃত্বে। জানা গেছে, তিনি সরকারের ইচ্ছানুসারে পররাষ্ট্রনীতিকে আরো সামনে বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

২. ব্রিকস সম্মেলন

সুজাতার নেতৃত্বে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মাঝে প্রথম বিরোধটা বাধে ব্রিকস সম্মেলনের সময়। ব্রিকস হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত একটি এসোসিয়েশন। এই সম্মেলনে মোদির ঘোষণার মাঝে ইসরায়েলের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য থাকায় প্রথম নরেন্দ্র মোদির অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ান সুজাতা। বিদেশনীতিতে ইসরায়েলের সাথে সুসম্পর্ক গতে তোলা মোদি প্রশাসনের একটি লক্ষ্য। এছাড়া এর আগে যদিও উইনাইটেড নেশন’স হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ভারতের নীতি থাকলেও, মোদি প্রশাসনের নীতি আলাদা।

৩. জাপানে কূটনীতি

অপরদিকে জাপানের ক্ষেত্রেও কূটনীতিতে মোদির ইচ্ছাপূরণে ব্যর্থ হয়েছেন সুজাতা। গত বছর সেপ্টেম্বরে মোদির জাপান সফরের পর তার ফলাফল আনতে ব্যর্থ হন সদ্যসাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। ফলে জাপানের সাথে মোদি প্রশাসনের সম্পর্কোন্নয়ন প্রক্রিয়া বেশ ধীর গতিতে চলছিলো।

৪. ডেনমার্ক কূটনীতি

অন্যদিকে ডেনমার্কের বিষয়েও সুজাতার কর্মকাণ্ড মোদিকে বেশ লজ্জায় ফেলে দিয়েছিলো। গুজরাট সরকার ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাতে চাইছিলো। কিন্তু সুজাতা সেসময় তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী আর আসেননি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন।

৫. পারস্পরিক সম্পর্ক

সুজাতা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজেদের মাঝে কর্মক্ষেত্রে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারলেও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সাথে তারা সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যর্থ হন। উপরন্তু প্রথানমন্ত্রীর অফিসকে এড়িয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশনীতি অনুযায়ী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছিলো, যা মোদির ভালো লাগেনি।

৬. জয়শঙ্করের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মোদির কাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক জয়শঙ্কর বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। গতবছর যখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেসময় উভয় দেশের মাঝে সম্পর্কোন্নয়নে মূল চালকের ভূমিকায় ছিলেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব। এবং এসময়ই প্রজাতন্ত্র দিবসে মোদি ওবামাকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান এবং ওবামা তা সাদরে গ্রহণ করেন।

৭. জয়শঙ্করের যোগ্যতা

জয়শঙ্কর নিজ কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, মোদি সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য অত্যন্ত দক্ষ এবং কার্যকর কর্মকর্তা। মোদির বিদেশনীতিও তিনি খুব দ্রুত বুঝে গিয়েছিলেন। ফলে ভারতের বর্তমান সরকারের কূটনীতিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্বে পরিণত করে।



মন্তব্য চালু নেই