যে লাইব্রেরিতে মানুষই বই

বই জ্ঞান আহরণের একটি সহজ মাধ্যম। একেক জনের অভিজ্ঞতা, দর্শন, চিন্তালব্ধ উপলব্ধি আরেক জনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বই যুগে যুগে জ্ঞান পিপাসুদের সহজবোধ্য মাধ্যম। কিন্তু এরচেয়ে সহজ কি কেউ চিন্তা করেছেন? হ্যাঁ ডেনমার্কের আবারজেল বইকে মানুষে রূপান্তর করেছেন। যা আরো সহজবোধ্য।
জ্ঞান আহরণের পুরাতন ধারণাকে পাল্টে দিতে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ৪২ বছর বয়সী যুবক রোন্নি আবারজেল খুলেছেন একটি মানব লাইব্রেরি; যেটি ‘হিউম্যান লাইব্রেরি’ নামে পরিচিত। কোনো উপন্যাস পড়ার পরিবর্তে এ লাইব্রেরিতে মানুষ ৩০ মিনিট ধরে পড়তে পারে ‘মানব বই’। অর্থাৎ লাইব্রেরিতে গিয়ে কোনো মানুষ যে বিষয়টি বা যে মানুষটি সম্পর্কে জানাতে চায় তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছেই জানতে চাইবে এবং উত্তর পাবে।

আবারজেল বলেন, অনেক সময় আপনি সুপারমার্কেটে গিয়ে কাউকে দেখে অনেক কিছুই ভেবে বসেন কিন্তু আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করার সাহস পান না। আমি এমন একটি জায়গা প্রস্তুত করতে চেয়েছি যেখানে আপনি তাদের যেকোনো কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারবেন। কারণ, তারা স্বেচ্ছায়ই আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক।

২০০০ সালে কোপেনহেগেনে এই লাইব্রেরি খোলেন আবারজেল। আর এরপর থেকে প্রায় ৭০টি দেশ তার এই ধারণা গ্রহণ করেছে। উত্তর আমেরিকার কয়েকটি জায়গাতেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এমন লাইব্রেরি। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারমন্ট, স্যান ডিয়েগো, ভার্জিনিয়া, টরোন্টো। এই ‘মানব বই’ এর ভিন্নতা নির্ভর করে মানুষের জন্মস্থান, পেশা, শারিরীক গঠনের উপর।

‘মানব লাইব্রেরি’তে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ৪১ বছর বয়সী দেব দুগুইড-মে বলেন, নিজের সংস্কৃতি সব সময় কিছু মানুষকে ভয় পেতে শিখিয়েছে। আবার কিছু মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থপনে ভয় পেতে শিখিয়েছে। কিন্তু ‘মানব লাইব্রেরি’তে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমার সংস্কৃতির দেওয়া ধারণাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে।
আবারজেল তার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, যাদেরকে খারাপ মানুষ বলে বিবেচনা করা হয় ডেনমার্কে বড় হওয়ার সময় তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু ১৯৮৯ সালে ১৫ বছর বয়সে পড়াশুনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কানিকটিকাটে চলে যান আবারজেল। কিন্তু যখন তিনি বাড়ি ফেরেন, তখন যারা তার থেকে ভিন্ন মতাদর্শী ছিলেন তাদের থেকে সম্মান পেতে শুরু করেন তিনি।
‘মানব লাইব্রেরি’ এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী ১৯৯৩ সালে তিনি এবং তার কয়েক বন্ধু মিলে ‘সহিংসতা বন্ধ কর’ ব্যানারে একটি যুব সংঘ খোলেন। ওই সংঘতে মানুষ তাদের ভিন্নতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পান।

২০০০ সালে সংগঠনটি কোপেনহেগেনে গড়ে তোলে ‘মানব লাইব্রেরি’। আবারজেলের ইচ্ছা ৫০টি রাজ্যেই তার এই আইডিয়া ছড়িয়ে দেওয়ার।

তিনি বলেন, সাঁচিকরণ কিংবা অন্য যেকোনো কারণে একদল মানুষ অন্য যে দলকে পছন্দ করে না কিংবা তাদের সম্পর্কে ওই বিষয়ে একেবারেই জানেন না তাদের পাশাপাশি বসানো গেলে সহিংসতা দূর করা সম্ভব বলে আমার ধারণা।



মন্তব্য চালু নেই