যে মন্দিরে একরাত কাটালেই মহিলারা হয়ে পড়েন গর্ভবতী

বৈচিত্রের দেশ ভারত— সে শুধু সংস্কৃতি বা ভাষাগত বৈচিত্র নয়, বিশ্বাস ও আস্থার বৈচিত্রও। বহু ধরনের বিচিত্র বিশ্বাস এই দেশে প্রচলিত রয়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে একেবারে ভিত্তিহীন বলে মনে হতে পারে। সেই রকমই এক বিশ্বাস গড়ে উঠেছে হিমাচল প্রদেশের সিমসা মাতা মন্দিরকে কেন্দ্র করে। বলা হয়, এই মন্দিরে এক রাত্রি কাটালেই নাকি নিঃসন্তান মহিলারা গর্ভবতী হয়ে পড়েন।

হিমাচল প্রদেশের মন্ডি জেলার অন্তর্গত লাড়াভাদোল তহশিলে সিমসা মাতা মন্দিরের অবস্থান। কিন্তু শুধু হিমাচল নয়, পার্শ্ববর্তী রাজ্য পঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই মন্দির প্রসিদ্ধ সন্তানদাত্রী মন্দির হিসেবে। কারণ মানুষের বিশ্বাস, এই মন্দিরে শতরঞ্জি পেতে শুয়ে থাকলে দৈবী কৃপায় সন্তান লাভ করেন নিঃসন্তান মহিলারা।

কী ভাবে কার্যকর হয় এই দৈবী কৃপা? নবরাত্রির সময়ে এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে পালিত হয় বিশেষ উৎসব। ওই এলাকায় উৎসবটি পরিচিত সলিন্দরা নামে। স্থানীয় ভাষায় ‘সলিন্দরা’ শব্দের অর্থ স্বপ্ন পাওয়া। এই উৎসবের সময়েই নিঃসন্তান দম্পতিরা আসেন এই মন্দিরে। পুরুষ নয়, শুধুমাত্র সন্তানাকাঙ্ক্ষী মহিলারা এই মন্দির চত্বরে শতরঞ্জি পেতে শুয়ে থাকেন দিনরাত। বলা হয়, দু’-এক রাত্রি শুয়ে থাকার পরেই মহিলাদের স্বপ্নের মাধ্যমে আশীর্বাদ করেন দেবী সিমসা মাতা। তাঁর কৃপাতেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে স্বপ্নপ্রাপ্ত মহিলাদের গর্ভসঞ্চার হয়।

অবশ্য এই মন্দিরে শুলেই যে দেবীর আশীর্বাদসূচক স্বপ্নদর্শন সম্ভব হবে, তা নয়। এমনকী স্বপ্ন দেখলেই যে সন্তানলাভ হবে, এমনটাও নয়। বলা হয়, দেবী যে স্বপ্ন দেন, তা হয় প্রতীকী ইঙ্গিতবাহী। সেই প্রতীকের অর্থোদ্ধার করতে পারলেই জানা সম্ভব, কোনও মহিলা সন্তান লাভ করবেন কি না। এমনকী আসন্ন সন্তানটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে— তা-ও নাকি জেনে ফেলা সম্ভব। কী রকম? বলা হয়, কোনও মহিলা যদি স্বপ্নে আম দেখেন, তা হলে তাঁর পুত্রসন্তান হবে। আবার কোনও মহিলা যদি স্বপ্নে দেখেন ঢ্যাঁড়শ, তা হলে তিনি কন্যাসন্তানের জননী হবেন। আর যদি স্বপ্নে কোনও পাথর, ধাতু বা কাঠের টুকরো কিংবা এই সমস্ত উপাদানে তৈরি কোনও জিনিসের দর্শন মেলে, তা হলে সেই মহিলাকে সারা জীবন নিঃসন্তান থাকতে হবে।

এই সমস্ত বিশ্বাসের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যে নেই, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ভক্তেরা অতশত ব্যাখ্যার ধার ধারেন না। তাঁদের বিশ্বাসই সম্বল। গত নবরাত্রিতে যেমন মন্দির চত্বরে দেখা মিলল পঞ্জাব থেকে আগত চঞ্চল কুমারীর। তিনি এসেছেন তাঁর সন্তানহীন ননদকে নিয়ে। তিনি বললেন, ‘দু-বছর আগে এই মন্দিরে শুয়েই আমার ছেলে হয়। এ বার তাই নিয়ে এসেছি আমার ননদকে।’

সিমসা মাতা মন্দিরে বিস্ময়ের সামগ্রী আরও রয়েছে। মন্দিরের পাশেই দেখা মেলে একটি বিশালাকার পাথরের। বলা হয়, এই পাথরটিকে দু’হাতে প্রাণপণ ঠেলেএ একচুল নড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু ডান হাতের কড়ে আঙুলের সাহায্যে সামান্য ঠেললেই নাকি হেলে যায় পাথরটি। স্থানীয়রা তাই পাথরটিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই