যে কারণে পদ পাওয়ার সাথে সাথেই পদত্যাগ করলেন ফালু

বিএনপির নতুন কমিটির ঘোষণার মতোই আলোচিত ঘটনা ঘটালেন দলটির সদ্য নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু। তবে এই পদ পাওয়ার মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। বিদায়ী কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা এ পদত্যাগপত্রটি শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়।

শনিবার বিকেল থেকে তার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখলেও সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন।

বিএনপির এক সিনিয়ন নেতা জানান, বিএনপি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতির চেয়ে ব্যবসায়ের দিকে নজর রাখছেন বেশি। যদিও রাজনৈতিক কারণে এরইমধ্যে জেল খেটেছেন। আর তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন। এভাবে সরাসরি দলীয় পদবি নিলে আবার সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি চাপ আসতে পারে। ব্যবসায় ধস নামতে পারে। বাংলাদেশে ও বিদেশে তার বর্তমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হয়তো তিনি পদত্যাগের মতো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে পদত্যাগ বিষয়ে মোসাদ্দেক আলীর বক্তব্য জানা যায়নি।

বিএনপির নতুন কমিটির উচ্চপর্যায়ের এক নেতা বলেন, আমি ফালুর সঙ্গে কথা বলিনি। তবে যতদূর মনে হচ্ছে, এটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মধ্যেই হয়েছে। তিনি আগে খালেদা জিয়ার সহকারী ছিলেন। পরে উপদেষ্টা হন। ফলে, সরাসরি দলীয় সাংগঠনিক কোনও পদে না থেকে ভাইস-চেয়ারম্যান হওয়াটা তার জন্য হয়ত স্বাভাবিক না। এটা তো ডিপপোস্ট।

যদিও বিএনপির দপ্তর সূত্র থেকে প্রাপ্ত পদত্যাগপত্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু লেখেন, ‘বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

এর আগে শনিবার বিকেলে এনটিভি অনলাইন জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পেয়েও তা থেকে পদত্যাগ করেছেন এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু।

এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছিলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমি তাকে (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ফোন করেছিলাম। তিনি ফোন ধরেননি। তবে জানতে পেরেছি, ব্যাংককে তার চিকিৎসা চলছে। যেহেতু খবরটি ফালু সাহেবের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে এসেছে, তাই ধরে নিচ্ছি বিষয়টি সত্যি।’

শনিবার (০৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির এই নতুন কমিটিতে ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি গত কমিটিতে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন ধরেননি।

বিএনপির দপ্তরের একটি সূত্রের দাবি, মূলত ফালু বিএনপি করলেও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় নন। এক্ষেত্রে ভাইস-চেয়ারম্যান পদটি সরাসরি রাজনৈতিক। তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম মূল হওয়ার কারণে তিনি রাজনৈতিক সংগঠন থেকে দূরে থাকতে চান। তবে খালেদা জিয়া কোনও দায়িত্বে রাখলে ফালুকে দেখা যেতে পারে বলে জানায় দপ্তরের সূত্রটি।

এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত কারণ থেকে হতে পারে। কোনও ক্ষোভ নেই, এটি বলতে পারি।

ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে কারণ জানতে পারিনি।



মন্তব্য চালু নেই