যে কারণে খালেদার হাত পান না শিরিন-রানু!

কোনো অনুষ্ঠান মঞ্চে বা গুলশান কার‌্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওঠা-নামার সময় তার পাশে এখন আর সেই পরিচিত মুখ দেখা যায় না। খালেদা জিয়াকে হাত ধরে সহায়তার দৃশ্যটি থাকলেও সেখানে নেই শিরিন সুলতানা কিংবা রেহানা আক্তার রানু।

খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই দুই নেত্রীর হাত হঠাৎ করেই ছুটে গেছে কদিন আগে। চেয়ারপারসনের হাত আর ফিরে পাচ্ছেন না দুই সাবেক ছাত্রনেত্রী।

কী কারণে শিরিন-রানুর ভাগ্যে এমন অমাবস্যা নেমে এল, তা নিয়ে দলে চলছে নানা জল্পন-কল্পনা। বেশির ভাগের ধারণা, বিএনপির কমিটিতে তাদের চেয়ে জুনিয়র নেত্রীদের বড় পদ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিরিন ও রানু। আর সেটি কানে গেলে ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া।

আবার অনেকে ‘শুধু পদ নিয়ে কথা বলায় এমনটা হয়েছে’ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, এর পেছনে আছে আরও অন্য কারণ।

কেউ কেউ আবার এর মধ্যে অন্তঃকোন্দলও দেখছেন। তাদের মতে, দলের মধ্যে একটি চক্র আছে যারা ‘সক্রিয় নেতাকর্মী’দের সামনে আসতে দিতে চায় না। খালেদা জিয়াকে ঘিরে থাকা ওই চক্রের ষড়যন্ত্রেই ছিটকে পড়েছেন সাবেক দুই ছাত্রনেত্রী।

এত সব জল্পনা-কল্পনার মধ্যে প্রকৃত সত্যটা কী?

গত ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ২০ দিন পর ঘোষিত নয়জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আছেন প্রথমবারের মতো দুজন নারী। তারা হলেন সাবেক এমপি ও মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।

মূলত এখান থেকেই শুরু এই নাটকের। শামা ও বিলকিসের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে মনোনয়নে দলের অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে শিরিন ও রানুর প্রতিক্রিয়া ছিল কড়া।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিলকিস ও শামার নাম ঘোষণার পর এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে কড়া ভাষায় উচ্চবাচ্চ হয় শিরিন সুলতানার। শিরিন বলেন, “আমরা তো আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম, দেখি আমাদের কোন পদ দেন।”

গত ১৯ এপ্রিল রাতে খালেদা জিয়া কার্যালয়ে আসার আগে তার প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার সঙ্গে শিরিন ও রানু ওই দুই নারীনেত্রীর বিষয়ে কথা বলেন। যাচাই-বাছাই করে পদ দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।এ সময় সেখানে উপস্থিত এক নেতা টেলিফোনে নতুন কমিটির এক নেতাকে তাদের কথাবার্তা শোনান। পরে ওই নেতা নিজের ফোনে সেসব বক্তব্য রেকর্ড করে নিজে গিয়ে খালেদা জিয়াকে তা বাজিয়ে শুনান।

এরপরই খালেদা জিয়া হাত সরিয়ে নেন শিরিন ও রানু থেকে।

রাতে ‌কার্যালয় থেকে নামার সময় শিরিন হাত ধরতে গেলে খালেদা জিয়া ধমকের সুরে বলেন,“আমার কারো হাত ধরতে হবে না।”

গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,প্রতিদিনের মতো গত ২১ এপ্রিল রাতে খালেদা জিয়া কার্যালয়ে আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন শিরিন সুলতানা। অন্যদিনের মতো গাড়ি থেকে নেমে একটু হেঁটে সিঁড়ি পর্যন্ত যান খালেদা জিয়া। সেখানে শিরিন সুলতানা তাকে সহায়তার জন্য হাত বাড়ালে খালেদা জিয়া তা উপেক্ষা করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন জানান, এ সময় তিনি (খালেদা) একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহম্মেদকে ডেকে হাত ধরতে বলেন।

অন্যদিন কার্যালয়ের ওপরে গেলেও ওই দিন শিরিন সুলতানা নিচতলায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে পরে বের হয়ে যান। এরপর আর ‍গুলশান কার্যালয়ে যাননি তিনি।

গত শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাগপার সম্মেলনে খালেদা জিয়া গেলেও সেখানে দেখা যায়নি শিরিন সুলতানাকে। তবে রবিবার সোহরাওয়ার্দীতে শ্রমিক দলের সমাবেশের মঞ্চে পেছন দিকে তাকে বসা দেখা গেছে। কিন্তু দুই অনুষ্ঠানেই খালেদা জিয়ার হাত পাননি তিনি।

এদিকে খালেদা জিয়ার নিজ আসন ফেনী-১-এর (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এমপি রেহেনা আক্তার রানু। তিনিও প্রতিদিন গুলশান কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেন। তাকেও এখন আর সেভাবে দেখা যায় না।

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার রানু মোবাইলে ফোন করলে তিনি সাড়া দেননি।শিরিন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে শিরিনের ঘনিষ্ঠরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিরিন সুলতানা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। তিনি সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। তিনিই বিএনপিতে নারীদের সক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন।

যে নেতা ফোনের রেকর্ড বাজিয়ে খালেদাকে শুনিয়েছেন বলে জানা গেছে, তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার নো কমেন্টস।”



মন্তব্য চালু নেই