যে কলেজের ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে ক্লাস করে

মৌলভীবাজার জেলার একমাত্র মহিলা কলেজ-মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি জাতীয়করণ হয় ১৯৯৭ সালে। কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিবছরই এই সংখ্যা বাড়ছে।

এছাড়া চাহিদা থাকার কারণে বছর বছর বাড়ছে বিভাগের সংখ্যাও। অথচ বাড়ছে না শিক্ষক, একাডেমিক ভবন ও ক্লাসের সংখ্যা।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি থেকে শুরু করে অনার্স কোর্স পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসেই ছাত্রীসংখ্যা অনেক। ক্লাসে জায়গা না হওয়ায় বেশিরভাগ ছাত্রীকে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের লেকচার শুনতে হয়।

এ নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আর অনেক সময় ক্লাসে ছাত্রীদের ম্যানেজ করতে না পেয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বর্তমান ছাত্রী সংখ্যা পাঁচ হাজার। সম্প্রতি অনার্স কোর্সে যুক্ত হয়েছে আরও দুইটি বিভাগ। শ্রেণিকক্ষের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক স্বল্পতায় অনেক সময় ক্লাস নেয়াও সম্ভব হয় না। আর ক্লাস নিলেও শ্রেণিকক্ষে বেশিরভাগ ছাত্রীকে ক্লাসে দাঁড়িয়ে লেকচার শুনতে হয়। ক্লাসে দাঁড়িয়ে লেকচার শোনার কারণে শ্রেণিকক্ষে প্রায় বিচ্ছৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

অধ্যক্ষ ফয়েজ আহমেদ শিক্ষক ও ক্লাস সংকট কাটাতে নানা চেষ্টা চালালে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

১৯৮৫ সালে শহরের কোর্ট এলাকায় ৩ দশমিক ৭৯ একর জমির ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ। ১৯৯৩ সালে চালু হয় ডিগ্রি কোর্স। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করে। আর ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজে চালু হয় অনার্স কোর্স।

বর্তমানে এই কলেজে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। আর উচ্চ মাধ্যমিক থেকে অনার্স পর্যন্ত অন্তত পাঁচ হাজার ছাত্রী পড়াশোনা করছে।

উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ বর্ষের ছাত্রী কলি বেগম জানায়, শ্রেণিকক্ষ ছোট হওয়ায় আমাদের ক্লাসে বসায় জায়গা হয় না। ফলে বসা নিয়ে প্রতিদিনই ছাত্রীদের মধ্যে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যারা বসার জায়গা পান না তাদেরকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে পেছনে দাঁড়িয়ে স্যারদের কথা কিছুই শোনা যায় না। ছাত্রীদের জন্য একটি মাত্র হোস্টেল থাকলেও সেখানে সীমিতসংখ্যক ছাত্রীর জায়গা হয়।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান পত্নী প্রয়াত দূররে সামাদ রহমানের নামে হোস্টেলটিতে মাত্র ১৩২টি সিট রয়েছে। এ নিয়েও ছাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই।

দূর-দূরান্তের ছাত্রীদের জন্য নেই পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে ছাত্রীদেরকে পাবলিক বাসে করে ভিড় ঠেলে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কলেজে আসতে হয়।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফয়েজ আহমেদ ও কলেজের অন্য শিক্ষকরা কে জানান, কলেজে অনার্স কোর্সের বিষয় প্রতিবছরই বাড়ছে, বাড়ছে ছাত্রী সংখ্যাও। অথচ পাঠদানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কোনো বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে না। ফলে এখানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদানের সময় অনেক ছাত্রীকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। এছাড়া শিক্ষক মিলনায়তন ও ডরমেটরি না থাকায় দূরের শিক্ষকদেরকে নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

কলেজ অধ্যক্ষ আরও জানান, কলেজে ৫৩টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ৩৬ জন। কলেজের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন অধ্যক্ষ।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই