যেভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করছে জালিয়াত চক্র

টাকার বিনিময়ে চারটি ধাপে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে জালিয়াতি চক্র। প্রশ্ন ফাঁসে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক, পিয়ন, দারোয়ান। আর এই কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রার্থীর কাছে নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান, র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের ১৩ জন এবং ৮ শিক্ষার্থীকে আটকের পর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এসময় জানানো হয়, আটককৃতদের মধ্যে একজন হল পরিদর্শকও রয়েছেন।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মুফতি মাহমুদ জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য জালিয়াত চক্রটি চারটি ধাপে কাজ সম্পূর্ণ করে। এদের মধ্যে প্রথম ধাপটি হচ্ছে, যারা টাকা দিয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী, এমন পরীক্ষার্থীদের খোঁজ করা। পরবর্তী ধাপের কাজ হচ্ছে- কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রশ্ন বের করে দেওয়া এবং এসবের সমাধান করে ফেলা। তৃতীয় ধাপে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক এবং কেন্দ্রের কর্মচারীদের সঙ্গে টাকা দিয়ে আঁতাত করা। চতুর্থ ধাপের কাজ হচ্ছে- এই প্রশ্নের সমাধান প্রার্থীর কাছে পৌঁছানো।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, হল পরিদর্শকের সহায়তা নিয়েই জালিয়াত এই চক্রের সদস্যরা চুক্তিকৃত ছাত্রদের মোবাইল ফোন নিয়ে হলে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এরপর হল পরিদর্শকের সহায়তায় প্রশ্নপত্র বাহিরে সরবরাহ করা হয়। পরে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রশ্নের উত্তরগুলো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ছাত্রদের নিকট পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, র‌্যাব ভর্তি জালিয়াত চক্রকে গ্রেফতারে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মোট ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ১৩ জন চক্রের সদস্য। বাকি ৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

আটকরা হলেন- খালেদুর রহমান (৩৪), শুকুর আলী ওরফে নীরব (২৩), শ্রীকান্ত ভদ্র (২৩), আবুল বাশার (২৫), মীর রেজওয়ান মাহমুদ তন্ময় (২১), মোজাম্মেল হক (২৫), মনিরুল ইসলাম(৩০), জামিল খান মিতুল (২৪), জুবায়ের আহম্মেদ (২৯), জসিম উদ্দীন (৪০), সুমন মিয়া (২২), কাজী শামীম হাবিব (৩১) এবং অসদুপায়ের সঙ্গে জড়িত আটক ৮ পরীক্ষার্থী হলেন- অরিত্র সিনহা (১৮), নুরুজ্জামান (১৮), কাফির হাসান (১৮), শামীম সিকদার (১৮), সংগীতা দাস (১৮), রাশেদ শেখ (১৮), সুব্রত (১৯) ও সবুজ হাসান (১৯)।

এদের মধ্যে শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের প্রভাষক হলেন জুবায়ের আহম্মেদ। তিনি ওই কলেজের একটি কেন্দ্রের পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আটকদের মধ্যে কেউ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত কিনা- জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের কাছে অপরাধটাই বড়। সে কোন দলের কোন মতের তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অপরাধটাকেই প্রাধান্য দিয়ে দেখা হবে।’

এই চক্রটির সঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলোর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান মুফতি মাহমুদ।



মন্তব্য চালু নেই