যেভাবে নিজের পরিচয় দিলেন বিশ্বনবি

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর আগমন সম্পর্কে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসহ অসংখ্য সীরাত গ্রন্থ রয়েছে। যাতে তাঁর পরিচয় ওঠে এসেছে। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের জানার আগ্রহে তিনি নিজেই তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন। যা তথ্যভিত্তিক ঐতিহাসিক সীরাতগ্রন্থ ইবনে হিশামে ওঠে এসেছে। তা তুলে ধরা হলো-

ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক বলেন, সাওর ইবনে ইয়াজিদ বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার নিজের সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন।

তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, শোনো। আমি পিতা ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়ার ফল এবং ভাই ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সুসংবাদের পরিণতি। আমি (মায়ের) গর্ভে আসার পর আমার মা স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর মধ্য থেকে একটা জ্যোতি বের হয়; যার ফলে সিরিয়ার প্রসাদসমূহ আলোকিত হয়ে যায়।

আর আমি হাওয়াযেন গোত্রের বনী সায়াদ বিন বকর শাখার ধাত্রীর (বিবি হালিমা) কোলে লালিত-পালিত হই। ধাত্রীমাতা হালিমার গৃহে অবস্থানকালে একদিন আমার এক দুধভাই-এর সাথে আমাদের (ধাত্রী মাতা হালিমার) বাড়ীর পেছনে মেষ চরাতে যাই।

তখন সাদা কাপড় পরিহিত সোনার (পাত্র) তশতরী ভর্তি বরফ নিয়ে দু’জন লোক আমার কাছে আসে। তারা আমাকে ধরে আমার পেট কেটে ফেলে। অতঃপর আমার হৃদপিণ্ড বের করে তাও কেটে ফেলে।

হৃদপিণ্ডের মধ্য থেকে এক ফোটা কালো জমাট রক্ত বের করে তা ফেলে দেয়। তারপর তশতরী ভর্তি ওই বরফ দিয়ে আমার পেট ও হৃদপিণ্ড ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়।

অতঃপর তাদের একজন অপরজনকে বললো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর উম্মাতের দশজনের সাথে ওজন কর। সে আমাকে আমার উম্মতের দশজনের সঙ্গে পরিমাপ করলো এবং আমি ওজনে দশজনের চাইতে বেশি হলাম।

অতপর সে আবার বললো, তাঁকে তাঁর উম্মাতের একশ’ জনের সাথে ওজন কর। ওজন করার পর আমি একশ’ জনের চাইতেও বেশি হলাম।

অতপর তারা আবার বললো, তাঁকে তাঁর উম্মাতের এক হাজার জনের সাথে ওজন কর। আমাকে এক হাজার জনের সাথে ওজন করলে আমি এবারও ওজনে এক হাজার জনের চেয়ে বেশি হলাম।

অতপর ওই ব্যক্তি বললো, রেখে দাও, আল্লাহর কসম, তাঁকে যদি তাঁর সমগ্র উম্মাতের সাথেও ওজন করা হয়, তাহলেও তিনি তাঁদের সবার চেয়ে ওজনে বেশী হবেন।’ (সুবহানাল্লাহ)

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই তাঁর পরিচয় বর্ণনা করেন। যা উম্মতে মুসলিমার জন্য এক অনুপম শিক্ষা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্ষ বিদারণ ছিল ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য দুনিয়ার যাবতীয় কাজে নিজেদের কুলুষমুক্ত রাখার অনুপ্রেরণা।

রবিউল আউয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত আলোচনা, আদর্শ প্রচার, প্রসার এবং তা উম্মতের জীবনে বাস্তবায়ন হোক নবি প্রেমিকদের ঈমানের দাবি।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোকিত জীবনের অনুপম আদর্শ গ্রহণ করে উত্তম জীবন-জিন্দেগি যাপন করার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই