যেভাবে জাতিসংঘের ভাষণে সুযোগ পেলেন মনি

বাংলাদেশ থেকে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সুযোগ পাচ্ছেন মনি বেগম (১৬)। এখন এই মনিকে নিয়েই সবার মাঝে আলোচনা। কে এই মনি, কীভাবে পেলেন এই সুযোগ?

জানা যায়, সৌভাগ্যবান মনি বেগম হলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।

ক্যাম্পেইনে সারা দেশের মধ্যে মনি নিজের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে প্রতিযোগীয় ঠিকে জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখার ও প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ার বিষয়টি এখন নিজ ইউনিয়ন পৃথিমপাশাসহ পুরো উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে।

স্থানীয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে এ বিষয়টি ক্লাসে তাদের শিক্ষার্থীদের বলছেন। মনির এমন সাফল্যের খবরে জেলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের এ অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থাকবেন। সেভ দ্য চিলড্রেন’র ‘এভরি ওয়ান ক্যাম্পেইন’-এর মাধ্যমে সারা দেশ থেকে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসাবে ৭০তম অধিবেশনের শিশু অধিকার সম্মেলন-২০১৫তে বক্তব্য রাখবে সে।

জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, বাল্যবিয়েসহ মোট ৪টি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবে কুলাউড়ার মনি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক পৌঁছার কথা রয়েছে তার।

আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর মোট ১০ দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবে মনিও। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামের এক দরিদ্র দিনমজুরের পরিবারে জন্ম এ মেধাবী শিক্ষার্থীর। পঞ্চমে এ প্লাস ও অষ্টমে ৪.৯৬ পেয়ে সে বর্তমানে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে বাণিজ্যিক শাখায় পড়ছে।

সে গড়গাঁও গ্রামের মহরম আলী ও হাওয়া বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মনি বেগম ৪র্থ। এ ব্যাপারে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাবেদ পাপ্পু ও অফিস সহকারী আবদুুল মালেক চৌধুরী মনি বেগমের জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সে রোববার এ উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে সবার কাছে দোয়া নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায়।

১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে তাকে ঢাকায় ৩ দিন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

উচ্ছ্বসিত এ শিক্ষক আরও বলেন, তার এ সাফল্যে আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ আনন্দে উদ্বেলিত। মনির উজ্জ্বল সাফল্য কামনা করে এ তার স্কুলের শিক্ষকরা জানান, মনি শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানের নয় পুরো কুলাউড়ার গর্ব।

ডাকসুর সাবেক ভিপি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কুলাউড়ার সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আমহদ মনি বেগমের এই কৃতিত্বের জন্য তার নিজের এবং দেশবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানান। জাতিসংঘের অধিবেশনের ভাষণে মনির সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক ভূমি সিলেটের মধ্যে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কুলাউড়া এমনিতেই রয়েছে এগিয়ে। আমি আশাবাদী এই অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি মনি সেভ দ্য চিলড্রেন তথা দেশবাসীর সহায়তায় বাকি শিক্ষাজীবন সুন্দর ও সফলভাবে শেষ করতে পারবে। সে নিজ এলাকা ও দেশের মানুষের কল্যাণে অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাণিজ্যিক বিভাগের মেধাবী ছাত্রী মনির অনুভূতি জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, কখনও ভাবিনি রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবো, সেখানে আমি আপনাদের দোয়ায় আমি আজ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে পেরেছি। আমি কখনও কল্পনাও করিনি এমনটা কোন দিন ঘটতে পারে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুুল লতিফ বলেন, আমরা অনেক আনন্দিত, আমাদের মনি এই এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অতি দরিদ্র এক দিনমজুরের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও প্রমাণ করে দিয়েছে মেধা আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও যাওয়া সম্ভব।



মন্তব্য চালু নেই