যেভাবে এই চার জঙ্গি নারী প্রচারণা চালাতো

গ্রেফতারকৃত জেএমবির চার জঙ্গি নারী নারী ইউনিটের পক্ষ থেকে উম্মা তাওহিদ ও আনসার ইসলামিয়া নামে দুটি অ্যাপস ব্যবহার করে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবির।

এর আগে মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নারী জঙ্গি শাখার উপদেষ্টাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নারী জঙ্গি সেলের উপদেষ্টা হলেন আকলিমা রহমান মনি (২২)। তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

অপর তিনজনের মধ্যে ডা. ঐশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক। বাকি দুজন হলেন মৌ (২২) ও মেঘনা (২২)। এ দুজন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

চারজনকে গাজীপুরের সাইনবোর্ড, মগবাজার ও মিরপুর এলাকা গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন থেকে জিহাদি কার্যক্রমের ভিডিও ও অডিও বার্তা উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবির বলেছিলেন, গ্রেফতারকৃতরা নারী জঙ্গি ইউনিটের সুসাইড স্কোয়াডের সদস্য কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এই চার নারী জঙ্গিকে পাঁচদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার তাদের ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজালাল আলম।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে সোমবার রাতে গাজীপুরের সাইনবোর্ড, মগবাজার ও মিরপুর-১ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ব্যাব-৪। গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, গত ২১ জুলাই র‌্যাব জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমীর মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান কে গাজীপুরের টঙ্গি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে জেএমবির ব্যানারে সংগঠিত জঙ্গি গ্রুপের নারী জঙ্গিদের একটি সেল রয়েছে বলে জানা যায়।

নারী সেলে তাদের নতুন কার্যক্রমে নারীদের একটি দল কাজ করে। এরা রাজধানীর বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির জানান, নারী সেলের উপদেষ্টা আকলিমা রহমান মনি গত রমজান মাসে ১২ হাজার টাকা ইয়ানত (চাঁদা) জোগাড় করেছিলেন। আকলিমার যোগানো ১২ হাজার টাকার মধ্যে ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন ঐশী।

এ খবর পেয়ে র‍্যাব আকলিমাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখে। র‌্যাব জানতে পারে, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী আকলিমা বিভিন্ন সময় জেএমবির দাওয়াতি কার্যক্রমে যোগ দিতে প্ররোচনা দিয়ে আসছিলেন।

আরবি শিক্ষার কথা বলে বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করতেন। তার সঙ্গে অনেকেই সাক্ষাৎ করতেন। তার বিরুদ্ধে ‘নতুন ধারার’ জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাব-৪- এর একটি দল সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে আকলিমাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার মুঠোফোনে জঙ্গিবাদ ও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য তথ্য পাওয়া যায়।

দেড় বছর ধরে তিনি এ জিহাদি দলের সঙ্গে রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে তিনি জঙ্গিবাদের বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন।

গ্রেফতারের পর আকলিমার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মগবাজার থেকে ঐশী নামের আরেক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ল্যাপটপ জব্দ করে এতে বিপুল পরিমাণ জিহাদি- বিষয়ক তথ্য, ম্যাগাজিন, লেকচার ভিডিও পাওয়া গেছে।

মিরপুর-১- এর জনতা হাউজিংয়ে অভিযান চালিয়ে মৌ নামের আরেক নারীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। র‍্যাব তার বাসায় প্রবেশের আগেই তিনি মুঠোফোনের মেমোরি কার্ড ধ্বংস করে ফেলেন। পরে র‍্যাব তার বাসায় তল্লাশি চালিয় জিহাদি বই উদ্ধার করে।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের সাবলেট বাসা থেকে মেঘলা নামের অপরর জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। আকলিমা ও মৌয়ের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে মেঘলা জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল। তার কাছ থেকেও জিহাদি বই, বক্তৃতা ও জিহাদি ভিডিও উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দলকে বড় করা এবং সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি তহবিল সংগ্রহ করে মাহমুদুল হাসানকে পৌঁছে দিতেন। আকলিমা উত্তরা হাইস্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং হলি চাইল্ড কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া এ তরুণী পড়ছিলেন ফার্মেসি বিভাগে।

ঐশীর ব্যাপারে র‌্যাব জানায়, চিকিৎসক বাবা মায়ের সন্তান ঐশী ২০১০ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢামেকে ভর্তি হন। চলতি বছর জানুয়ারিতে এমবিবিএস শেষ করে জুনে তিনি ইন্টার্নশিপ শুরু করেন। ঐশীর বাবা ডা. বিশ্বাস আক্তার হোসেন (৫৮) ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসক। মা ডা. নাসিমা সুলতানা (৪৮) আছেন সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে।

মৌ মিরপুরের ইসলামীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি ও মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন মৌ। মেডিকেল ও ইউনিভার্সিটি ভর্তির জন্য তিনি ইউসিসি’র ফার্মগেট শাখায় কোচিং করেন।

পরে ২০১৩ সালে ভর্তি হন মানারত ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগে। মেঘনা ঢাকার আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ঢাকা ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী তিনি।



মন্তব্য চালু নেই