যেথায় পাহাড়ের সাথে নীল আকাশের গভীর মিতালী

যেখানে পাহাড়ের সঙ্গে নীল আকাশের গভীর মিতালী। ছন্নছাড়া মেঘগুলো যেন উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের কোলে। সকাল-সন্ধ্যা প্রায় সময়ই পাহাড়ে মেঘের খেলা সাজেকের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। যেদিকে চোখ যাবে, শুধু মেঘ আর রংয়ের খেলা। পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে দূরের গ্রামের দিকে তাকালে মনে হবে কোমল হাতে রং তুলিতে আঁকা ছোট শহরের ছবি।

সাম্প্রতিক সময়ে কল্পনাতীত পরিবর্তন ঘটেছে রাঙামাটির সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়। নতুন অনেক কিছুই যোগ হয়েছে সেখানে। বিদ্যুৎ নেই ঠিকই; আছে সোডিয়াম লাইট, বায়ো-বিদ্যুৎ। মসৃণ সড়ক, থ্রি স্টার মানের হোটেল, রিসোর্ট, ক্লাবও গড়ে উঠেছে। আর সে কারণেই প্রাকৃতিক নিসর্গে সাজানো সাজেক এখন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। পর্যটনবান্ধব সাজেক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এক সময়ের দূর্গম সাজেকে এখন রাতের চিত্রও ভিন্ন। রুইলুই পাড়াতে রাতে জ্বলছে সোডিয়াম বাতি, তাও আবার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে তাকালেই মনে হবে, মেঘের চাদর ঢেখে রেখেছে সাজেককে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক বছরে পাল্টে গেছে সাজেক। অতীতের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য বিশাল। সাজেকে কিছুদিন আগেও বিশ্রামের ব্যবস্থা ছিল না। পানির কষ্ট তো ছিলই। এখন এই সমস্যাগুলো আর নেই। যেখানে এক সময় পায়ে হেটে যাওয়া ছিলো মুশকিল সেখানে এখন অত্যাধুনিক গাড়িতে পৌঁছানো যায়। ফলে সাজেকে প্রতিদিন পর্যটক বাড়ছে। সাজেকের মূল কেন্দ্র রুইলুইতে পানির সংকট দূর করতে নির্মিত হয়েছে ওয়াটার হাউস। পাশেই পাবলিক টয়লেট। চালু হয়েছে ‘পাহাড়ি রেস্তোরাঁ’। মনোমুগ্ধকর অত্যাধুনিক দুটি রিসোর্ট নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। দুটোই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আলো’র উদ্যোগে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘আলো রিসোর্ট’। পর্যটকদের অনেকেই বলেছেন, এটা বাংলার দার্জিলিং।

খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামছুল ইসলাম বলেন, ‘স্থাপনা নির্মাণের কাজ অনেকটা শেষ হলেও পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সমস্যার অবসান ঘটেছে। দার্জিলিং নয়, সাজেকের তুলনা হবে শুধুই সাজেক। দার্জিলিং বা মিজোরামের স্থাপত্য, নকশা বা বৈচিত্র আমরা অনুকরণ হিসেবে না নিয়ে সাজেককেই বিংশ শতাব্দীর উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকবান্ধব এলাকা হিসেবে সাজেককে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সাজেকের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং নিজস্বতা ধরে রাখা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’

দীঘিনালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজিব ত্রিপুরার মতে সম্ভাবনাময় সাজেককে তুলে ধরতে হবে নিজস্বতা ঠিক রেখে। সেভাবেই উন্নয়নের কাজ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আবদেল মিয়া ও অনুস্কার সেন সাজেকের পরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘সাজেকের এই পর্যটনবান্ধব উন্নয়ন একদিন দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে।’
রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় ৮ কি.মি. পেছনে পাহাড়ি রাস্তায় ইউ টার্ন

রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাংগা লুসাই বলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় ব্যাপক উন্নয়নে আমরা খুশি! উন্নয়নের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানির সংকট দূর হয়েছে। অনেকে লাভবানও হচ্ছেন।’

সাজেক যেতে হয় খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে। সাজেক ইউনিয়নকে দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন বলা হয়ে থাকে। সাজেকের পথে দীর্ঘ ৬৭ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কের দুপাশের প্রকৃতি পর্যটককে মুগ্ধ করে। তবে ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়িতে সাজেক যাওয়ার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম! কাচালং, আচালং নদী অতিক্রম করে দীর্ঘ এই ভ্রমণ মুহূর্তের জন্যও খারাপ লাগে না। সাজেক কমলার জন্যও বিখ্যাত।



মন্তব্য চালু নেই