যেখানে ঘুমিয়ে থাকে সিরিয়ার যুদ্ধশিশুরা!

সৌন্দর্য সবসময়ই আনন্দের নয়, তা বিষাদও তৈরী করতে পারে। নিচের ছবিগুলো শিল্পের বিবেচনায় খুবই সুন্দর, তবে একইসঙ্গে বাস্তবের বিবেচনায় যন্ত্রণার আর বেদনার।

ছবিগুলোর বিয়ষবস্তুর ট্রাজেডি আর ফটোগ্রাফির সৌন্দর্য পরস্পরের মধ্যে দাগ টেনে দেয় বৈপরীত্যের। সিরিয় গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে বেড়ানো শিশুদের নিয়ে করা সুইডিশ ফটোগ্রাফার মাগনুস ওয়েনমানের ‘যেখানে শিশুরা ঘুমায়’ ফটো অ্যালবামের সেই ছবিগুলো তুলে ধরা হলো প্রিয়’র পাঠকদের জন্য।

যুদ্ধজীবন থেকে পালিয়ে এসেও এই শিশুগুলোর ভাগ্যে জোটেনি ঘুমানোর ভাল জায়গা। জীর্ণ পোষাকে, অপরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তাহীন জায়গাগুলোতে তাদের ঘুমানোর দৃশ্য যেন এক বাস্তবিক ট্র্যাজেডি। কেবল ঘুমের প্রশ্ন নয়, যুদ্ধ কী করে এইসব শিশুর উপর অস্বাভাবিক দানবীয় অভিঘাত ফেলে যায়; তার বর্ণনাও রয়েছে ছবিগুলোর সঙ্গে।

আহমাদ, বয়স: ৭ বছর; স্থান: হরগোজ/রোস্কে, সার্বিয়া।

slide_455558_6118578_free21

এমনকি ঘুমের স্থানটিও সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত নয়। ইদলিবে আহমাদের বাসায় যখন বোমা হামলা হয় তখন সে বাড়িতেই। গোলা তার মাথায় আঘাত করে তবুও সে বেঁচে যায়। কিন্ত তার ভাই মারা যায়। কয়েকবছর আহমাদের পরিবার নিকটস্থ প্রতিবেশীর বাসায় কোন ঘর ছাড়াই কাটিয়ে দেয়। এখন আহমাদ স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা হাজারো অভিবাসীর সাথে হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী হাইওয়ের ওপরে থাকে। দেশ ছেড়ে বিদেশে ভ্রাম্যমান জীবনের ১৬তম দিনের দৃশ্য এটি। আহমাদের বাবা জানায়, এই যাত্রায় কখনো তারা বাসে, রাস্তায়, বনে রাত কাটিয়েছে।

তামাম, বয়স: ৫ বছর; স্থান: আজরাক, জর্দান।

slide_455558_6118580_free20

বালিশ নিয়ে ভয়ে আছে পাঁচ বছর বয়সী তামাম। প্রত্যেকদিন ঘুমানোর সময় বালিশের কারণে কান্নাকাটি করে সে। কোন এক রাতে স্বদেশে নিজের বাড়িতে বিমান হামলায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় তার ঘর। তারপর থেকেই প্রায় ২ বছর বাড়িবিহীন ঘুমাচ্ছে সে। কিন্তু এখনও সে অনুধাবন করতে পারিনি যে বালিশই তার বিপদের উৎস নয়।

শেহেদ, বয়স: ৭ বছর।

slide_455558_6118584_free19

শেহেদ ছবি আঁকতে ভালোবাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তার ছবিগুলোর বিষয় একই রকম হয়ে যাচ্ছে। আর তা হল অস্ত্র। হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী ফাঁকা জায়গায় সাময়িকাবে গড়া বসতিতে ঘুমানো শেহেদের মা বলেন, ‘সে সবসময় এসবই দেখে, এগুলো সবখানে।’ এখন সে একেবারেই ছবি আঁকে না। পরিবারটি স্বদেশ ছেড়ে আসার সময় ছবি আঁকার কোন ক্রেয়নই সঙ্গে আনেনি। শেহেদ এখন আর একদমই খেলে না। পরিবারের এই পালিয়ে বেড়ানো, শিশুগুলোকে বড় করে দিয়েছে। তারা এখন প্রতিদিন প্রতিঘন্টায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভ্রাম্যমান জীবনে পরিবারটি অনেক খাবারের কষ্টে ভোগে। কখনো কখনো তাদেরকে রাস্তার পাশের গাছে থাকা আপেল খেয়েই জীবনধারণ করতে হয়েছে। পরিবারটি যদি এই ভ্রাম্যমান জীবনের কাঠিন্য আগেই আঁচ করতে পারত তবে হয়ত সিরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জীবনকেই পছন্দ করত।

ফাতিমা, বয়স: ৯ বছর; স্থান: নরবাগ, সুইডেন।

slide_455558_6118586_free18

প্রত্যেক রাতেই ফাতিমা স্বপ্ন দেখে সে জাহাজ থেকে পড়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার সরকারী বাহিনী যখন শহরের বেসামরিক নাগরিকদের উদভ্রান্তের মত হত্যা করছিল তখন নিজ শহর ইদলিব থেকে মা মালাকি ও দুই ভাইকে নিয়ে পালিয়ে আসে ফাতিমা। দেশ থেকে পালিয়ে এসে লেবাননের একটি শরণার্থী শিবিরে ২ বছর থাকার পর পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে ও তারা জনাকীর্ণ নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। ঐ নৌকার পাটাতনেই এক গর্ভবতী নারী ঠা ঠা রোদে ১২ ঘন্টা পর একটা মৃত বাচ্চা জন্ম দেয়। দেহে প্রাণহীন বাচ্চাটিকে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। ফাতিমা সব দেখেছিল। শরণার্থী বহনকারী নৌকাটি যখন সাগরে ডুবতে শুরু করে, তখন ইতালিয় কোস্টগার্ড তাদেরকে বাঁচায়।

সিরাজ, বয়স: ৯ বছর; স্থান: সুরুখ, তুরস্ক।

slide_455558_6118588_free18

মাস তখন সে তীব্র জ্বরে ভোগে। ডাক্তার জানায় তার পোলিও হয়েছে আর তার বাবা-মাকে ওষুধ-পত্র কিনে বৃথা টাকা নষ্ট করতে মানা করে। কারণ তার ভালো হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। তারপরেই যু্দ্ধ চলে আসে। পঙ্গু ছেলেকে চাদরে মুড়িয়ে কোলে করে কোবান থেকে তুরস্কে নিয়ে আসার নিদারুণ কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলে সিরাজের মা লায়লা। বাকশক্তিহীন সিরাজ শরণার্থী শিবিরে একটি কাঠের দোলনা পায়। রাত কিংবা দিন সবসময় সেখানেই শুয়ে থাকে সে।

মোহাম্মদ, বয়স: ১৩ বছর; স্থান: নিজিপ, তুরস্ক।

slide_455558_6118590_free17

১৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাড়ি ভালোবাসে। আলেপ্পোতে নিজ বাড়িতে থাকাকালীন সে শহরের বাড়িগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে আনন্দ পেত। এখন, তার প্রিয় অনেক দালানই টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। হাসাপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে স্থপতি হওয়ার স্বপ্নকে কখনো পূরণ করতে পারবে কিনা তা চিন্তা করে বিস্ময় প্রকাশ করে সে। যুদ্ধের সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার হল এটি আপনাকে সর্বদা ভয় পেতে অভ্যস্ত করবে। মোহাম্মদ বলে, ‘আমি এটি বিশ্বাস করতাম না’।

রালিয়া, বয়স: ৭ বছর এবং রাহাফ, বয়স: ১৩ বছর; স্থান: বৈরুত, লেবানন।

slide_455558_6118592_free16

৭ বছর বয়সী রালিয়া এবং ১৩ বছর বয়সী রাহাফ বৈরুতের রাস্তায় বাস করে। দামেস্কতে নিজ বাড়িতে থাকাকালিন এক গ্রেনেড হামরায় মা ও ভাইকে চিরতরে হারায় তারা। বাবার সাথে এক বছর এখানে সেখানে থেকেছে তারা। তারা তাদের পিচবোর্ড বাক্সে একসঙ্গে গাদাগাদি করে থেকেছে। রালিয়া কাঁদতে শুরু করলে রাহাফ জানায় সে অসাধু লোকদের ভয়ে ভীত।

গুলিস্তান, বয়স: ৬ বছর; স্থান: সুরুখ, তুরস্ক।

slide_455558_6118594_free15

চোখ বন্ধ করা আর ঘুমানোর ভিতরে যে পার্থক্য আছে তা ছয় বছর বয়সী গুলিস্তান ভালো করেই জানে। সে চোখ বন্ধ করতেই পছন্দ করে, কারণ যতবারই সে ঘুমায় তখনই দুঃস্বপ্নরা হানা দেয়। সে বলে, আমি এখানে ঘুমাতে চাই না। আমি বাড়িতে ঘুমাতে চাই। কোবানে থাকা তার বালিশের শূন্যতা সে খুব বোধ করে। মাঝে মাঝে সে তার মায়ের ওপরেই ঘুমিয়ে পড়ে তার দেহকে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে।

মোয়াদ, বয়স: ৫ বছর; স্থান: আম্মান, জর্দান।

slide_455558_6118596_free14

পেয়াজু তৈরি করতে ময়দা প্রয়োজন ছিল পাঁচ বছর বয়সী মোয়াদের মায়ের। আর তার জন্য দারের নিকটবর্তী বাজারে যায় তারা। বাজারে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে কোন এক ট্যাক্সিতে বোমা লাগিয়ে রাখা হয়। বোমা বিস্ফোরণে মোয়াদের মা জায়গায় মৃত্যুবরণ করেন। বোমা বিস্ফোরণে মোয়াদের মাথা, পিঠ ও পশ্চাৎদেশে ব্যাপক ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সে জর্দানে পালিয়ে আসে।

শাম, বয়স: ১ বছর; স্থান: রোস্কে/হরগোজ, সার্বিয়া।

slide_455558_6118598_free13

সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তের কাছে ৪ মিটার উঁচু লোহার গেটের সামনে মায়ের বাহুডোরে শুয়ে আছে শাম। এই ইউরোপে পৌছানোর জন্য নিদারুণভাবে কষ্ট করেছে তারা। শাম এবং তার মায়ের পৌছানোর একদিন আগেই অভিবাসীবাহী শেষ ট্রেনটি অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। আর এখন হাজারো অভিবাসীর সাথে বন্ধ করে দেওয়া হাঙ্গেরিয় সীমান্তের সামনে অপেক্ষা করছে তারা।

আমির, বয়স: ২০ মাস; স্থান: জাহলে ফায়দা, লেবানন।

slide_455558_6118600_free12

২০ মাস বয়সী আমির জন্ম থেকেই শরণার্থী। তার মায়ের বিশ্বাস গর্ভে থাকাকালীনই মানসিক বিপর্যেয়র শিকার হয় তার ছেলে। ৩২ বছর বয়সী আমিরের মা শাহানা জানায়, আমির এখন পর্যন্ত একটা শব্দও মুখ থেকে বের করেনি। প্লাস্টিকের তৈরির তাঁবুর ভেতরে আমিরের খেলা করার কোন খেলনা নেই। কিন্তু মাটিতে যা পায় তাই দিয়েই খেলা করে আমির। তার মা বলে, ‘অনেক হাসলেও এখন পর্যন্ত কোন কথা বলেনি সে।’

লামার, বয়স: ৫ বছর; স্থান: হরগোজ, সার্বিয়া।

slide_455558_6118602_free11

বাগদাদের নিজ বাড়িতে পড়ে আছে প্রিয় পুতুল, খেলনা ট্রেন আর বলটি। বাড়ির কথা উঠলেই লামার প্রায়ই এই জিনিসগুলোর কথা স্মরণ করে মন খারাপ করে। সর্বনাশা বোমা সবকিছু বদলে দিয়েছে। লামার দাদী সারা বলেন, ‘ওখানে বাস করা সম্ভব ছিল না।’ তুরস্ক থেকে রবারের নৌকায় দুই বার চেষ্টার পর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির সীমান্তে পৌছায় তারা। এখন লামার সীমান্তবর্তী ঘন জঙ্গলে ঘুমায়।

আব্দুল করিম, বয়স: ১৭ বছর; স্থান: এথেন্স, গ্রীস।

slide_455558_6118604_free10

আব্দুল করিম আদ্দোর কাছে কোন টাকা নেই। শেষ সম্বল এক ইউরো দিয়ে এথেন্সে যাওয়ার ফেরি টিকিট কেটেছিল সে। প্রত্যেকদিন হাজারো শরণার্থী আসা ওমোনিয়ো স্কয়ারে আছে সে। এখানে কালোবাজারিরা ভুয়া পাসপোর্টসহ বাস ও বিমান টিকিট জালিয়াতি করে মানুষকে ফ্লাইট পাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আব্দুল করিম কোথাও যায়নি। ‍ফোন ধার করে সিরিয়ায় মায়ের সাথে কথা বলতে সক্ষম হলেও নিজের বিরূপ পরিস্থিতি সম্বন্ধে মাকে কিছুই বলতে পারবে না সে। সে বলে, মা আমার জন্য চোখের পানি ফেলে আর আমার ভাগ্য নিয়েও সে খুবই ভয়ে থাকে। আর তাই আমি তাকে আর উদ্বিগ্ন করতে চাই না।

ওয়ালা, বয়স: ৫ বছর; স্থান: দার-এল-ইয়াস, লেবানন।

slide_455558_6118606_free9

পাঁচ বছর বয়সী ওয়ালা বাসায় যেতে চায়। সে জানায়, আলেপ্পোতে তার নিজস্ব বাসা ছিল। আর সেখানে অন্তত ঘুমানোর সময় সে কাঁদত না। কিন্তু এখানে এই শরণার্থী শিবিরে সে প্রতিরাতেই কাঁদে। বালিশে ঘুমানোটা তার কাছে ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার কারণ রাতের বেলাটাই তার কাছে ভয়ঙ্কর লাগে। সহিংসতার পর থেকেই তার এই অবস্থা।

ঈমান, বয়স: ২ বছর; স্থান: আজরাক, জর্দান।

slide_455558_6118608_free8

দুই বছর বয়সী ঈমানের নিউমোনিয়া ও বুকে ঘা হয়েছে। এটা তার হাসপাতাল জীবনের তৃতীয় দিন। সে বেশিরভাগ সময়েই ঘুমিয়ে থাকে। এমনিতেই সে অত্যন্ত হাসোচ্ছল থাকে কিন্তু এখন সে ক্লান্ত। সুস্থ থাকার মুহূর্তে সে চারদিকে দৌড়ে বেড়াত। ১৯ বছর বয়সী ঈমানের মা ওলাহ জানায় সে বালিতে খেলতে পছন্দ করে।

আবদুল্লাহ, বয়স: ৫ বছর; স্থান: বেলগ্রাড, সার্বিয়া।

slide_455558_6118610_free7

আবদুল্লাহর একটি রক্ত রোগ আছে। গত দুই দিন ধরে সে বেলগ্রাডের কেন্দ্রীয় স্টেশনের বাইরে ঘুমাচ্ছে। দারায় নিজ বাড়িতে চোখের সামনে বোনকে খুন হতে দেখেছে সে। আবদুল্লাহর মা বলেন, ‘সে এখনও শোকে বিহব্বল আর প্রতিরাতেই দুঃস্বপ্ন দেখে। আবদুল্লাহ ক্লান্ত আর খুব একটা স্বাস্থ্যবান না কিন্তু তাকে ওষুধ খাওয়ানোর মত টাকা তার মায়ের কাছে এখন নেই।

ইসরা, বয়স: ১১ বছর, ইসমা, বয়স: ৮ বছর, সিদরা, বয়স: ৬ বছর; স্থান: মাজদাল আনজার, লেবানন।

slide_455558_6118642_free6

৩৭ বছর বয়সী সালমা যখন তার তিন শিশুসন্তান ইসরা, ১১, ইসমা,৮ এবং সিদরাকে,৬ খাটে শুইয়ে দিল তখন যেন সারা রাজ্যের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেল সে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, শিশুসন্তানগুলো তাদের অপহৃত বাবাকে ঘুমের ভিতরে স্বপ্নে বেশি দেখে। সিদরা বলে, ‘আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি বাবা আমার জন্য ক্যান্ডি কিনে আনছে।’

ফারা, বয়স: ২ বছর; স্থান: আজরাক, জর্দান।

slide_455558_6118644_free5

দুই বছর বয়সী ফারা ফুটবল ভালোবাসে। ফারার বাবা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে বল বানিয়ে দেন কিন্তু সেটি বেশিদিন টেকে না। আগামীকাল সুদিন ফিরবে এই আশায় প্রত্যেক রাতেই সে ফারা এবং তার ৯ বছর বয়সী মেয়ে তিশামকে শুভরাত্রি জানায়। অন্যান্য স্বপ্নগুলো অপূর্ণ রয়ে গেছে কিন্তু তবুও সে আশায় বুক বেঁধে আছে।

জুলিয়ানা, বয়স: ২ বছর; স্থান: হরগোজ, সার্বিয়া।

slide_455558_6118646_free4

এখানে তাপমাত্রা আনুমানিক ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঘুমেই মধ্যেই জুলিয়ানা ক্রোধে উন্মত্ত উৎকন্ঠিত জনতার দৃশ্য দেখতে পায়। জুলিয়ানার পরিবার দুই দিন ধরে সার্বিয়াতে হেঁটে চলেছে। তিন মাস আগে তারা তাদের এই সাম্প্রতিক যাত্রা শুরু করে। পাতলা শালে মাটিতে শুয়ে থাকা মেয়ের গা ঢেকে দেন মা ফাতিমা। তারপরই নিশ্চুপ হয়ে যান তিনি। কয়েক মিটার দূরে পূর্বেকার ঘুমানোর জায়গাটি অগণিত অভিবাসী জনতার পদব্রজে ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। ছবিটি আগস্টের শেষে তোলা। সেসময় হাঙ্গেরি রেকর্ড পরিমাণ অভিবাসীর ঢল সামলাতে সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই সীমান্তবর্তী শহর হরগোজ দিয়ে সীমানা পেরোনোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই জুলিয়ানার পরিবার সেদিকে যাত্রা শুরু করে।

মারাম, বয়স: ৮ বছর; স্থান: আম্মান, জর্দান।

slide_455558_6118648_free3

রকেট হামলার পরপরই স্কুল থেকে নিজ বাড়িতে পৌঁছায় আট বছর বয়সী মারাম। ছাদের এক টুকরো তার গায়ের ওপরেই আঁছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালস্থ করেন তার মা। আর সেখান থেকেই সে বিমানযোগে জর্দানের সীমন্তবর্তী অঞ্চলে চলে আসে। মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। দূর্ঘটনার প্রথম ১১ দিন মারাম কোমায় ছিল। জ্ঞান ফিরে আসলেও চোয়াল ভেঙ্গে যাওয়ায় কথা বলতে পারে না সে।

মাহদী, বয়স: ১.৫ বছর; স্থান: হরগোজ/রোস্কে, সার্বিয়া।

slide_455558_6118650_free2

মাহদীর বয়স দেড় বছর। এই ছোট্ট জীবনে যুদ্ধ আর সংঘর্ষের অভিজ্ঞতাই তার আছে। শত শত অভিবাসী তার ওপর দিয়ে গেলেও তীব্র নিদ্রায় থাকে সে। হাঙ্গেরির ভেতর দিয়ে না যেতে দেওয়ায় তারা প্রতিবাদ করতে থাকে। সীমান্তের অন্যপাশে শত শত পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান কর্তৃক যেকোন মূল্যে সীমান্ত রক্ষা করার গুরু আদেশ আছে তাদের প্রতি। পরিস্থিতি ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই ছবিটি তোলার পরের দিনই পুলিশ অভিবাসীদের ওপরে টিয়ার গ্যাস ও জল কামান নিক্ষেপ করে।

আহমেদ, বয়স: ৬ বছর; স্থান: হরগোজ, সার্বিয়া।

slide_455558_6118652_free1

মধ্যরাতের পরে আহমেদ ঘাসের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। বড়রা এখনও চারিদিকে বসে পরিকল্পনা ফাঁদছে কিভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের নিবন্ধিত না করে হাঙ্গেরি থেকে বেরনো যায়। ছয় বছর বয়সী আহমেদ এই দীর্ঘ পদব্রজে নিজের ব্যাগ নিজেই বহন করেছে। উত্তর সিরিয়ার নিজ শহর দেইর-এজ-জোরে বাবা খুন হওয়ার পর আহমেদকে নিজের লালনে রাখা তার চাচা জানায়, সে অনেক সাহসী তবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই শুধুমাত্র কান্নাকাটি করে।

ফটোগ্রাফার: মাগনুস ওয়েনমান

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট



মন্তব্য চালু নেই