যেকোন মুহুর্তে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান!

বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা চলছে। চীন সীমান্তে সরকারি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কিছু আভাস ফুটে উঠেছে। তা হলো অং সান সূচি এমন সংকট মোকাবিলা করছেন, যাতে মনে করা যেতে পারে সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও অন্যরা রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া অং সান সূচির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির মধ্যে পীড়ন দেখা দিয়েছে। প্রাণঘাতী নয় এমন চারটি বোমা হামলা হয়েছে ইয়াঙ্গুনে। এর সঙ্গে সার্বিক অর্থনৈতিক আন্ডার-পারফরমেন্স সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার বিষয়ে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরছে।

মিয়ানমার বিষয়ক কিছু পর্যবেক্ষক অনেক দিন ধরে মনে করেন যে, ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সংকট সৃষ্টি করছে সেখানকার সেনাবাহিনী। এর মধ্যে সেখানকার কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইং নভেম্বরে জরুরি অবস্থার সাংবিধানিক বিধানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। সেনাবাহিনী বা তাতমাদা কি অং সান সূচির সরকারকে উৎখাতের মনোবাসনা নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ২৮শে নভেম্বর এই আশঙ্কা আবার জোরালো হয়েছে।

ওইদিন সাবেক ক্ষমতাসীন ও সেনাবাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ও অন্য ১২টি ছোট দল মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টকে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনডিএসসি) বৈঠক আহ্বান করার দাবি জানায়। এনডিএসসিতে রয়েছে সেনাবাহিনীর আধিপত্য। কারণ, এতে সদস্য রয়েছেন ১১ জন। তার মধ্যে ৬ জনই বর্তমানে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল জেনারেল। তাদের রয়েছে কোনো প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেয়ার অধিকার। ১১ সদস্যের মধ্যে তাদের ভোটই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এর ফলে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মধ্যেই ওই রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। তবে গত এপ্রিলে অং সান সূচির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট হতিন কাইওয়া এ কমিটির কোনো বৈঠক আহ্বান করেননি। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা বিষয়ে ইউএসডিপি ও অন্যদের বিবৃতিকে দেখা যেতে পারে মিয়ানমারকে সামরিক নিয়ন্ত্রণে ফেরার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে।

সেনাবাহিনী ও তার মিত্ররা এনএলডিকে ক্ষমতায় এসে তাদের অবস্থানকে ধরে রাখতে সাংবিধানিক সংশোধনীর সুবিধার মাধ্যমে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এটা তার ব্যত্যয়। ২০০৮ সালের সংবিধানের মূল কিছু বিধানের বিষয়ে জন-অসন্তোষ ছিল। তা সত্ত্বেও কমান্ডার ইন চিফ গত ৬ বছর ধরে যেসব বিবৃতি দিয়েছেন তা দেখা হয় এক ধরনের আত্মত্যাগ হিসেবে। তিনি সংবিধানের বৈধতা ও তা টেকসই দেখতে চান। কিন্তু সামরিক শাসনে ফিরে গেলে তা হবে তার দৃষ্টিভঙ্গির উল্টোটা।

সংবিধানের অধীনে প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত হন যে, সেনাবাহিনী যাদের শত্রু বলে চিহ্নিত করেছে সেই সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হামলার মতো সময়ে বেসামরিক সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো না যায় তাহলে প্রেসিডেন্ট ওই অবস্থায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তিনি সরকার-সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশাসন চালাতে পারবেন অথবা ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালানোর পরিবর্তে ওইসব এলাকায় সেনা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

স্থানীয় পর্যায়ে জরুরি অবস্থার অধীনে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছতার বিষয়টি আইনগতভাবে তদারক করতে পারবেন জাতীয় পর্যায়ে, ইউনিয়ন ও পার্লামেন্ট পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু এমনটা হবে না সন্ত্রাসবিরোধী ‘ক্লিয়ারেন্স’ অভিযানের ক্ষেত্রে। এমনটাই ঘটছে মিয়ানমারের পশ্চিমা ও উত্তরাঞ্চলে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে সম্প্রতি শান ও কাচিন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে লড়াই তীব্র হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় এনএলডির ঘাটতি রয়েছে পদক্ষেপ নেয়ায়। এতেই সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে সরকারের নীরবতাকে দেখা হচ্ছে হতবুদ্ধি হিসেবে। দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের লড়াইয়ের কারণ ও এর পরিণতি সম্পর্কে তাতমাদা যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকারের বিবৃতিও পুরোটাই সেই একই রকম। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী দেশকে রক্ষায় বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে দেখানো হয়। দৃশ্যত সেনা কর্তৃপক্ষের ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ সীমিত করায় সূচি অনাগ্রহী অথবা মনে করছেন তিনি অসমর্থ।

জরুরি অবস্থার সনদে যেমনটা বলা হয়েছে সে মতো বৃহত্তর অর্থে জবাবদিহিতা আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। রাখাইন রাজ্যের শুধু মংডু শহরের কথাই যদি ধরা হয়। এ শহরটি মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানে ৯ই অক্টোবরের ঘটনার পর সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে ৫৭৫ জনকে। তার মধ্যে নিরাপত্তা হেফাজতেই মারা গেছেন ৬ জন। এটাকে জরুরি অবস্থার সংজ্ঞার অধীনে মনে হচ্ছে সমর্থন দেয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যেকোনো সরকার এ বিষয়টিতে নজর দিতে চাইবেন।

বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও কোনো সামরিক অভ্যুত্থান ঘনায়মান বলে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, রাজধানীমুখী কোনো সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য প্রস্তুতির জন্য কোনো কর্মকর্তার রদবদল দেখা যাচ্ছে না। সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলে বিরোধিতা করতে আশপাশে যে ধরনের জনসমাগম হয় তা সামাল দেয়ার জন্য কোনো ইউনিট মোতায়েন হয়নি। সরকার এখন দেশের পশ্চিমে নতুন বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে। উত্তরে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর একটি নতুন জোটের বিরুদ্ধে পুরোমাত্রায় যুদ্ধ করছে সরকার। এ অবস্থায় ক্ষমতা নিলে সেনাবাহিনীর জন্য তা হতে পারে বিপর্যয়। নিরাপত্তা হুমকিকে বাদ দিলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বৈদেশিক নীতি ও রাজনৈতিক যেসব সমস্যার তীব্রতা ও জটিলতা মোকাবিলা করছে মিয়ানমার তা এই মুহূর্তে নিজেদের কাঁধে নিতে চায় না মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব।

ভুল বিবৃতি : নভেম্বরে কমান্ডার ইন চিফের দেয়া দুটি বিবৃতি ও ২০০৮ সালের সংবিধানের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝির কারণে মিডিয়া ও কিছু বিশ্লেষক সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। গত ৮ই নভেম্বর ব্রাসেলসে প্রতিরক্ষা প্রধানদের একটি বৈঠক আহ্বান করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মিলিটারি কমিটি। তাতে বক্তব্য রাখার জন্য অপ্রত্যাশিতভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় কমান্ডার ইন চিফকে। এর জবাবে প্রথম বিবৃতি দিয়েছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বিষয় নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশনে মিন অং হ্লাইংকে বক্তব্য রাখতে বলা হয়। বলা হয়, তার দেশে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথে কতটুকু এগিয়েছে এবং জাতীয় পুনরেকত্রীকরণে কতটুকু অর্জন হয়েছে তা নিয়ে বক্তব্য রাখতে।

কয়েক শত বছর আগের বিস্তৃত ইতিহাসের পর্যালোচনার শুরুতেই বলতে হয়, মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে একটি দেশকে বর্ণনা দিয়েছেন। ওই দেশটি অবস্থিত এশিয়ার দুটি সুপারপাওয়ার চীন ও ভারতের মাঝে। সে দেশটি অব্যাহতভাবে রাষ্ট্রবিরোধী সশস্ত্র চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করেছে। এসব হুমকি সত্ত্বেও তাতমাদা একহাতে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে নিয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালের সংবিধান হলো তার নিশ্চয়তা।

সংবিধানের চ্যাপ্টার ১১তে বর্ণিত জরুরি অবস্থার দিকে মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ যখন মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তখন তিনি সংবিধানকে পাশে ঠেলে রাখার হুমকি দেননি। পক্ষান্তরে তিনি এ বিষয়কে দেখেছেন ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সহজেই ক্ষমতা দখল করবে না এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখবে না- এর পর্যায়ক্রমিক প্রভিশন বা বিধান’ হিসেবে। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহের জন্য চীন সফরে যাওয়ার আগে তাদের উদ্দেশে গত ২৬শে নভেম্বর বক্তব্য রাখেন কমান্ডার ইন চিফ। এতে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংবিধানের একাদশ অধ্যায় তুলে ধরেন।

তার ওই বক্তব্য নিয়ে সরকারি একটি পত্রিকা ও ইংরেজি ভাষার মিডিয়া ভুলভাবে রিপোর্ট করে। ওই বক্তব্যে ক্ষমতা দখলের অবশ্যই অথবা হুমকি মূলক কোনো কথাই নেই। বরং তিনি জাতীয় বিষয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে তার দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। এ বিষয়ে ‘মাইয়াওয়াদ্দি’ পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণ যথার্থ রিপোর্ট করে। তারা রিপোর্টে বলে যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় ইস্যুতে সিনিয়র জেনারেল বলেছেন, তাতমাদা জাতীয় রাজনীতিতে অব্যাহতভাবে ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেছেন, পক্ষপাতী রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই। জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিধানের আরেকটি অংশে নাগরিকদের মনে করিয়ে দেয়া হয় যে, সংকটময় সময়ে দলীয় রাজনীতির স্থান দখল করে জাতীয় রাজনীতি।

জরুরি অবস্থা : মিয়ানমারের ২০০৮ সালের বিতর্কিত সংবিধানের একাদশ অধ্যায় নিয়ে হয়তো কম অনুধাবন করা হয়েছে। বিশেষ করে এই সেকশনের ‘ইমার্জেন্সি’ অংশ নিয়ে। এই সেকশনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে। প্রথমত, এতে আলাদা করা হয়েছে স্থানীয় ও জাতীয় জরুরি অবস্থাকে। এ অবস্থায় রাজ্যের, আঞ্চলিক অথবা স্থানীয় সরকারকে সরিয়ে দিয়ে তার স্থানে আসবে কেন্দ্রীয় সরকার বা সেনাবাহিনী। দ্বিতীয়ত, জরুরি অবস্থার সময়সীমা সীমিত করে দেয়া হয়েছে সংবিধানে। এটি এমন একটি বিধান যা এক সময় ছিল অচিন্ত্যনীয়। তৃতীয়ত, জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও তা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছে সংবিধান।

অন্য কথায়, সংবিধানকে সরিয়ে রাখা ও দেশজুড়ে সামরিক শাসন জারি না করেই অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও বাইরের আগ্রাসন মোকাবিলা করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া কিভাবে পরিচালনা করা হবে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিতে তা সংবিধানের বার্মিজ বা ইংরেজি সংস্করণ কোনোটিতেই পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। এর ফলে মাঝেমধ্যেই ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, সংকটকালে সরকারে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সীমা ছাড়া ফিরে আসার হুমকি রয়েছে সংবিধানে। সাবেক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের অধীনে তিনটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১২ সালে তা হয়েছিল রাখাইন রাজ্যে।

২০১৩ সালে মেইকটিলায়। ২০১৫ সালে লাউখাইয়ে। পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। প্রথম দুটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল সেনা নেতৃবৃন্দ ও সম্ভবত এনডিএসসির সঙ্গে পরামর্শক্রমে। এর ফলে সেনা শাসন নয় তবে প্রতিরক্ষা সার্ভিসের সহায়তায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা হয় তাদের দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালনের জন্য। লাউখাইয়ে দক্ষিণ চীন থেকে বিদেশি সমর্থনপুষ্টরা পূর্বপরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে- এমনটা মনে করে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে। এ সময় সরকার এনডিএসসির কিছু সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে। এর ফলে স্থানীয় প্রশাসনের স্থানে বেসামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে সেনা প্রশাসন চালু করা হয়।

ওইসব এলাকার মানুষ নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। তারা সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। তবে তিনটি জরুরি অবস্থা সরকারের সাংবিধানিক ভূমিকায় হস্তক্ষেপ করেনি। এসব বিষয় দেখাশোনা করেছে পার্লামেন্ট। ভবিষ্যতে যে ভিন্ন কিছু ঘটবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনটি জরুরি অবস্থাই প্রত্যাহার হয়েছে। এর মধ্যে দুটি জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছিল পার্লামেন্ট। এখনও যে একই নিয়ম প্রয়োগ করা হবে না এরও কোনো কারণ নেই।

যদি সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র না হয় তাহলে যা ঘটছে তা কি?

অভ্যুত্থানের পূর্বাভাসের মূলে রয়েছে তিনটি সঠিক নির্ণায়ক। প্রথমত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জাতীয় ইস্যু থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ২০০৮ সালের সংবিধানের বিভিন্ন ধারার বিষয়ে সেনাবাহিনী ও সূচির এনএলডির সংঘাতময় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এনএলডি ও অং সান সূচি অব্যাহতভাবে সংবিধান সংশোধনের জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিশেষ করে সংবিধানের ওই ধারাটি সংশোধন করতে চায় তারা, যে ধারার কারণে সূচি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজের অবস্থান থেকে কখনো সরে আসেননি কমান্ডার ইন চিফ। তিনি বলেছেন, দ্রুততার সঙ্গে ও সম্ভবত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। এই যে মতবিরোধ তা অচিরেই সমাধান হবে না। তবে তা সরাসরি সংঘাতমূলকও নয়। এটা সহজ নয় কিন্তু তবু সেনাবাহিনী ও এনএলডির মধ্যে টেকসই সহাবস্থান।

তৃতীয়ত, দেশের উত্তর ও পশ্চিমের বর্তমান লড়াই নিয়ে যদিও তাদের একই রকম উদ্বেগ তবু অং সান সূচি ও কমান্ডার ইন চিফের মধ্যকার সম্পর্কের দৃশ্যত অবনতি হয়েছে। এই দু’জনের মধ্যে পুনর্মিলন দেখা গিয়েছিল কয়েক মাস আগে। কিন্তু এখন তা নেমে এসেছে সেনাপ্রধানের ফেসবুকে মন্তব্য ও বক্তব্যে। বর্তমান সময়ের গুরুত্ব হয়তো স্বীকার করছেন না সূচি। অথবা তিনি হয়তো অজ্ঞাত কৌশল বা স্ট্র্যাটেজিক কারণ অবলম্বন করছেন। যেটাই হোক তার পেশাগত ক্যারিয়ার এখন ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক কঠোর অবস্থায় পড়েছে। মিয়ানমারের হৃদয় থেকে অনেকটা দূরে জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংকট ব্যবস্থাপনায় তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।

(মেরি কালাহান ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের হেনরি এম জ্যাকসন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আন্তর্জাতিক বিভাগের সহযোগী প্রফেসর। তিনি লিখেছেন, ‘মেকিং এনিমিজ: ওয়ার অ্যান্ড স্টেট-বিল্ডিং ইন বার্মা’ বই।)

লেখাটি নিক্কি এশিয়ান রিভিউ থেকে অনূদিত। এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই