যুদ্ধাপরাধী রক্ষায় আপোষ চেষ্টা, ফোন করেন এমপিরাও

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশ স্বাধীনের পর কেটে গেছে ৪৪ বছর। কেবল শুরু হয়েছে বিচার। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেক অপরাধীই উঠে গেছে সমাজের অনেক উঁচুতে, হয়েছেন বিত্তশালী, ক্ষমতাধর রাজনৈতিক মহল ও উচ্চবিত্ত সমাজের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সখ্য, আত্মীয়তা। এখন মামলা থেকে বাঁচতে এইসব কিছুই ব্যবহারের চেষ্টা করছে তারা। আত্মীয়তার দোহাই, টাকার লোভ, ক্ষমতার জোর কোনো কিছুই বাদ থাকছে না।

ইতিমধ্যে আপোষ মীমাংসার অভিযোগ উঠেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর, তদন্ত সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রসিকিউটর এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, মামলার প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ঘটনাবহুল এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এসময় অনেকেই অনেকভাবে মামলায় আপোষ মীমাংসার জন্য টাকা, ক্ষমতার জোর দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়। বিভিন্ন মামলা থেকে সবচেয়ে ঘৃণিত অভিযুক্তের নাম বাদ দিতে একাধিকবার সরকারের সংসদ সদস্যরাও ফোন দিয়েছেন, সুপারিশ জানিয়েছেন।

তবে প্রসিকিউশনের দাবি, তারা কখনোই দায়িত্বে অবহেলা করেননি। টাকার লোভ, ভয়ভীত কিছুতেই তাদের টলানো যায়নি। তার কোনো কিছুতেই পিছপা হননি। এর বড় প্রমাণ বিগত মামলাগুলোর বিচার।

এদিকে প্রসিকিউশনের এমন দাবি সত্ত্বেও ‘আপোষ মীমাংসা’র অভিযোগ উঠেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে।

প্রসিকিউশন সূত্র থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ হান্নান ও তার ছেলের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন মোহাম্মদ আলী। এই মামলার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী সম্পৃক্ত না থাকলেও তিনি নানাভাবে মামলাটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছিলেন। এ মামলায় তার আপোষ করার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে ঘুরপাক খাচ্ছিল। অবশেষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বিষয়টি জানেন। তিনি মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এখন তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়েছে।

অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক চিঠি হাতে পেলেও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির কপি এখনো হাতে পাইনি। আমার বিরুদ্ধে আপোষ মীমাংসার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, কাল্পনিক ও মানহানিকর। কারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তা জানি না। আইন মন্ত্রণালয় তদন্ত করে এ বিষয়ে জানাবেন। তাই তদন্তের আগে এ নিয়ে কথা বলা ঠিক না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমি এ বিষয়ে সকলকে জানাবো।’

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় আপোষ মীমাংসার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘আসামি হলে সে শাস্তি পাবেই। কিন্তু আসামির ধর্ম সে বাঁচার জন্য বিভিন্নভাবে বাঁচতে চাইবে, তদবির করবে। আমরা তদন্ত সংস্থায় যে কেউ ফোন করেনি, তা নয়। তবুও এরকম ফোন আসবে জেনেও আমরা কাজের ক্ষেত্রে কোনো ছাড়ের মানসিকতা দেখাইনি। আমরা আইন মেনেই কাজ করেছি। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। এখানে সবাই সবার আত্মীয়। সেই আত্মীয়র সুযোগও অনেকে কাজে লাগাতে চেয়েছে। কিন্তু কেউ পারেনি। তবে আমরা তদন্ত সংস্থা যে শতভাগ ভালো আছি এটাও বলা যাবেনা। তবে ভালো থেকে কাজ করার চেষ্টা আমরা সবসময়ই করে যাচ্ছি।’



মন্তব্য চালু নেই