‘যদি সকালে না উঠি তাহলে চোখে পানি দিও’

দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন ব্যস্ততায় কাটছে আলোচিত প্রাক্তন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের প্রতিটি দিন। বদলে গেছে জীবনের রুটিন। মাহারা দুই সন্তানকে কীভাবে লালনপালন করছেন, তা তুলে ধরেছেন নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে।

বাবুল তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- প্রতিদিন শুরু হয় ভোর থেকে। সন্তানদের ঘুম থেকে উঠিয়ে, নাশতা করিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। মেয়ের স্কুল সকালে। রোজ ভোর ৬টায় উঠতে হয়। নিজে ফ্রেশ হয়ে, মেয়েকে তুলি। ভোরে প্রায় দিনই মেয়ে উঠতে চায় না। রাতে ঘুমানোর আগে বলে রাখে, ‘বাবা, আমি যদি সকালে না উঠি তাহলে আমার চোখে পানি দিও, ঠিক আছে?’ না, আমি চোখে পানি দিই না বরং আদরে আদরে ঘুম থেকে উঠিয়ে রেডি করি তাকে।

মা নাশতা রেডি করেন। মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাই। বাবাভক্ত মেয়েকে ক্লাসে বসিয়ে আসার সময় কাছে টেনে কানে কানে বলে, ‘বাবা, আমাকে কিন্তু নিতে আসবা।’ বাসায় ফিরে ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নাশতা করিয়ে নিজে নাশতা সেরে তারপর যাই অফিসে। এরপর শত ঝামেলার মাঝেও মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসি। সারা দিন ফোনে তদারকি করি। মেয়ে দুপুরের ভাতটুকু আমার হাতে ছাড়া খায় না। খেয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়ানো, আবার ছেলেকে আনতে যাওয়া। এসবের মাঝেই অফিস করা। আমার ছেলেমেয়ে আমার দেখা সবচেয়ে যৌক্তিক শিশু।

বাবুল আরো উল্লেখ করেন, ‘মাহির আর নিখাদসহ আমরা তিনজন প্রতিদিন একসঙ্গে গল্পের বই পড়ি, আর ড্রইং করি। প্রথম দিকে বই পড়তে তারা পছন্দ করত না আর এখন গল্প না পড়ে রাতে ঘুমাতেই পারে না। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে ছেলে মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কারও সাথে মিশতে বা খেলতে চাইত না। এখন ছেলে খেলাধুলায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি যেহেতু তারা দুজনেই ছবি আঁকতে ভালোবাসে তাই তাদের ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া তার এবং ছেলেমেয়েদের দৈনন্দিন আরো কিছু কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

কোনো কিছু কিনতে গেলে ছেলেমেয়ে দুজনেই আগে দাম জানতে চায়। তারপর জিজ্ঞেস করে পকেটে কত টাকা আছে। যদি বেশি দাম হয় তবে আমারই বাচ্চাদের বুঝিয়ে সেটা কেনার জন্য রাজি করাতে হয়। নিজের জামাকাপড় আর পড়ার রুম ভীষণ পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে দুজনেই।

আর মেয়েটা নিজের জন্য যা কিনবে তা তার বাবার জন্যও চাই। নিজে যা খাবে তা তার বাবাকেও খাওয়ানো চাই। তার মুখের এক একটা বুলি যেন ময়নার বুলি। আমি আদর করে তাকে ডাকি ‘ময়না’।

প্রতিনিয়ত শুভানুধ্যায়ীরা ফোনে এবং মেসেজে বাচ্চাদের সম্পর্কে জানতে চান। সকলের শুভকামনায় সব বাধা পেরিয়ে বেড়ে উঠুক আমার মাহির আর নিখাদ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামে দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।



মন্তব্য চালু নেই