যত বেশি মিথ্যা বলবেন, তত বেশি মিথ্যুক হয়ে উঠবেন

ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য বা প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে প্রতারণা, একটা মিথ্যা নিমিষেই বড় কিছু হয়ে যেতে পারে। নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, অসৎ পন্থা যেকোনো মানুষের জন্যে পিচ্ছিল পথ হয় যায়। ক্রমাগত মিথ্যা মস্তিষ্কে আবেগের অনুভূতি কমাতে থাকে বলে জানান গবেষকরা।

মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে বায়োক্যামিকেল লক্ষণগুলো এতটাই জোরালে যে, কারো মস্তিষ্ক স্ক্যান করেই বলা যায় সে মিথ্যা বলতে যাচ্ছে কি না।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি বিভাগের গবেষক নিল গ্যারেট বলেন, অসততা বাড়তেই থাকে যদি তা বার বার এই উপায় অবলম্বন করা হয়। প্রথমবারের মতো গবেষণায় এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আরেক গবেষক তালি শরৎ বলেন, বিশ্বাসঘাতকতা, ক্রীড়া ডোপ গ্রহণ, অর্থনৈতিক চুরি বা যেকোনো অসৎ আচরণ অনেক সময় ছোট বলেই মনে হয়। কিন্তু তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে যারা জড়িত হয়ে পড়েন তারা হঠাৎ করেই নিজেকের বড় ধরনের অপরাধে জড়িত হতে দেখেন।

এ গবেষণায় ৮০ জনকে বেছে নেওয়া হয়। বিভিন্ন বয়ামে পেনি রয়েছে এমন হাই রেজ্যুলেশনের ছবি দেখানো হয় তাদের। তাদের সাথে ছিল একজন করে সঙ্গী। একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে একই বয়ামের বাজে মানের ছবি দেখে তারা সঙ্গীদের কি পরিমাণ পেনি রয়েছে তা দেখতে বলেন। এই সঙ্গীরা মূলত গবেষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছিলেন। কিন্তু অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি জানতেন না।

প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সৎ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, সঙ্গীরা যত সঠিকভাবে কত অর্থ আছে বলতে পারেবন, তারা তত বেশি অর্থ পাবেন। আরেক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মিথ্যা বলতে বলা হয়। একবার মিথ্যা বলার কারণে উভয়ই লাভবান হয়েছেন। কিন্তু পরেরবার মিথ্যা বলার কারণে অংশগ্রহণকারীরা তার সঙ্গীকে হারান।

শরৎ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মিথ্যা বলে যখন তা নিজের এবং অন্যের জন্য ভালো হয়। তবে নিজের জন্য লাভ এবং অন্যের জন্য ক্ষতিকর হলে মানুষ কিছুটা কম মিথ্যা বলতে চায়।

ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা লাভবান হতে যে মিথ্যার শুরু করেন, পরবর্তিতে তা বাড়তে দেখা যায়। এর মাধ্যমে তারা আরো বেশি লাভবান হতে চেয়েছিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ যত বেশি মিথ্যা বলতে থাকে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা তত কম উত্তেজিত হতে থাকে। একে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ইমোশনাল অ্যাডাপটেশন’। প্রথমবার মিথ্যা বলা বা প্রতারণা করলে বেশ খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু খুব দ্রুত আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। তখন আর তেমন খারাপ লাগবে না। তখন এ কাজে আপনাকে আটকাতে কোনো অনুভূতি কাজ করবে না।

তবে অসৎ পন্থা অবলম্বনের বিষয়ে মস্তিষ্কের আবেগগত অনুভূতি কমে আসার বিষয়টি আরো অসৎ হতে সহায়তা করে, নাকি এটা স্রেফ একই ঘটনার প্রতিফলন তা এখনো জানেন না বিশেষজ্ঞরা।

তবে একটি উপসংহার টানা হয়েছে গবেষণায়। তা হলো, সত্যিকার অর্থেই চর্চায় মানুষ অনেক ত্রুটিহীন হয়ে ওঠে। যত বেশি মিথ্যা বলা যাবে, তত বেশি মিথ্যা বলতে পটু হয়ে উঠবেন। এতে নেতিবাচক আবেগ ক্রমেই শূন্যের কোঠায় পৌঁছে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস



মন্তব্য চালু নেই