যত থাপ্পড় কাণ্ড ক্লাব ফুটবলে

ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিয়ে খেলতে হয়। খেলা এমনই একটি বিষয় যা অন্যকে কীভাবে সম্মান করতে হয়, সহ্য করতে হয়; কীভাবে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হয় সেটা শেখায়। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ফুটবলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। কিন্তু তারপরও ফুটবল মাঠে ঘুষি-লাথি তো সাধারণ ব্যাপার, কখনো কখনো বেদম মারার ঘটনাও ঘটে। খেলোয়াড় কর্তৃক রেফারি বা লাইন্সম্যানকে মেরে ফেলারও নজির রয়েছে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে ইতালির খেলোয়াড় মাতেরাজ্জিকে ফ্রান্সের তারকা খেলোয়াড় জিনেদিন জিদানের ঢুস মারার ঘটনা অনেকেরই মনে থাকার কথা। আজ তবে জেনে নেওয়া যাক  ক্লাব ফুটবলের কিছু থাপ্পড় কান্ডের হাস্যকর ঘটনা।

পেপ গার্দিওলা-থিয়াগো আলকানতারা:

পেপ গার্দিওলা-থিয়াগো আলকানতারা

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে জার্মান সুপার কাপের ফাইনালে ৪-২ গোলের হারার পর মেজাজ হারিয়ে বায়ার্ন মিউনিখ বস পেপ গার্দিওলা চড় মারেন তার প্রিয় খেলোয়াড় থিয়াগো আলকানতারাকে। অন্যদের করেন বিষোদগার। মেজাজ হারিয়েই এমনটি করেছিলেন সাবেক বার্সা বস। তবে তার এই থাপ্পর দেয়া নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। কারণ ভুলের জন্য শিষ্যকে থাপ্পড় মারতেই পারেন গুরু।

রিও ফার্ডিন্যান্ড-রেফারি:
রিও ফার্ডিন্যান্ড-রেফারিওয়েস্টহ্যামের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৬-০ গোলে জয় পাওয়ার পর উচ্ছ্বাসের ছলে রিও ফার্ডিন্যান্ড রেফারি স্টেভ বেনেতকে থাপ্পড় মেরে বসেন। কিন্তু তার ভাগ্য ভালো যে রেফারি বিষয়টি উচ্ছ্বাস ভেবে উড়িয়ে দেন। অন্যথায় নিষেধাজ্ঞাসহ জরিমানাও গুনতে হতো তাকে। তবে ফার্ডিন্যান্ডের থাপ্পড় মারার ঘটনা এটাই প্রথম ছিল না। ২০০২-০৩ মৌসুমে তিনি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ক্যাম্পেইনে থামস বার্ডিচকে থাপ্পর মেরেছিলেন।

দিদিয়ের দ্রবগা-নেমাঞ্জা ভিচিদ:
দিদিয়ের দ্রবগা-নেমাঞ্জা ভিচিদমেজাজ হারিয়ে ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার উনাইটেডের তারকা নেমাঞ্জা ভিদিচকে থাপ্পড় মেরে বসেছিলেন সাবেক চেলসি তারকা দিেিয়র দ্রগবা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে ভিদিচকে থাপ্পর মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। পাশাপাশি হাতছাড়া করতে হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাও। কারণ তিনি মাঠ ছাড়ায় তার পরিবর্তে পেনাল্টি নিয়েছিলেন জন টেরি। আর পেনাল্টি নিতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান টেরি। মিস হয় পেনাল্টি। ফলে টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে ম্যানইউর কাছে হেরে যায় তারা। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১২ সালে চেলসিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতিয়ে সেই কষ্ট ভুলেছিলেন দ্রগবা।

ব্রিয়ান ক্লহ-সমর্থক:
ব্রিয়ান ক্লহ-সমর্থকনটিংহ্যাম ফরেস্টের কিংবদন্তি কোচ ব্রিয়ান ক্লহ নিজ সমর্থককে থাপ্পড় মেরে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৯ সালে। তার দল কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সকে হারানোর পর কিছু সমর্থক হইহুল্লোর করে মাঠে প্রবেশ করে। তারা এলোপাতাড়ি দৌড়াতে থাকে। এ সময় তিনি একজন সমর্থককে ধরে দু-চার ঘা মেরে দেন। এটা নিয়ে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন না নিলেও এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ক্লহ।

সেল্টিক সমর্থক-দিদা:
এসি মিলানের গোলরক্ষক দিদাকে সেল্টিকের এক সমর্থক মাঠে ঢুকে চোখে-মুখে থাপ্পড় মেরেছিল। দিদার দোষ ছিল তিনি সেল্টিকের দারুণ সব আক্রমণ বার বার ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন। এজন্য ওই সমর্থক মাঠে প্রবেশ করে দিদার চোখে-মুখে থাপ্পড় মেরে বসে। দিদা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দৌড় দেয়। পরে অবশ্য দিদা তাকে ধাওয়া করেছিলেন। কিন্তু ধরতে পারেননি। তিনি ধরতে না পারলেও নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে পুলিশে দেয়।

ব্রিয়ান কারাসকো নিজেকেই :
সেল্টিক সমর্থক-দিদাথাপ্পড় সাধারণত একজন অন্যজনকে দেয়। কিন্তু অন্যের হাত টেনে এনে নিজেকে থাপ্পড় মারার ঘটনা ফুটবলে খুবই বিরল। আর সেই বিরল কা-টাই ঘটিয়েছিলেন চিলির অনূর্ধ্ব-২০ দলের খেলোয়াড় ব্রিয়ান কারাসকো। ক্যামেরায় দেখা যায় সে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের হাত ধরে নিজের গালে থাপ্পড় মারছেন, যাতে করে রেফারি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়টিকে মাঠ থেকে বের করে দেন। কারাসকোর এমনটি করার কারণ ছিল তার দল ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১৪ মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে। তাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রেফারি তার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে হারিয়ে ইকুয়েডরই যুব বিশ্বকাপে স্থান করে নিয়েছিল।



মন্তব্য চালু নেই