ম্যাচের মাঝপথে অনুশকার সঙ্গে কথোপকথন : শাস্তি পেতে পারেন কোহলি

প্রবল বৃষ্টিতে মাঝপথে সাময়িক বন্ধ একটা আইপিএল ম্যাচ। ভিআইপি বক্সে থাকা অভিনেত্রী প্রেমিকা অনুশকার সঙ্গে মহাতারকা ক্রিকেটারের কিছুক্ষণের কথোপকথন। আর তাকে ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেটে ফের তোলপাড়।

সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না বিরাট কোহলির। আইপিএলের নিয়ম ভাঙার ‘অপরাধে’ নতুন বিতর্ক বেঁধে গেল বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আইকনকে নিয়ে।

যার পাল্লায় পড়ে আইপিএল চেয়ারম্যান মিডিয়ায় প্রথমে এক রকম বিবৃতি দিয়ে পরে তা পাল্টালেন। ডিন জোন্সের মতো কোনও কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার বিরাটকে আক্রমণ করে বসলেন। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কোনও কোনও সদস্যের মনে হল, এটা নিয়ে বিরাটকে বোঝানো উচিত। নিয়মটা সবার জন্যই এক। আজ বিরাটকে ছাড় দিলে কাল অন্য কাউকে দিতে হবে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট— রবিবারের চিন্নাস্বামী। যেখানে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচ তখন বৃষ্টিতে সাময়িক বন্ধ। দেখা গেল, চিন্নাস্বামীর প্লেয়ার্স এনক্লোজার্সের একেবারে সামনে এসে বিরাটের সঙ্গে কথা বলছেন অনুষ্কা। ব্রডকাস্টাররাই সেটা চিন্নাস্বামীর জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখাতে শুরু করে। আইপিএলের নিয়মাবলী অনুযায়ী যা নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ ম্যাচ তখনও সরকারি ভাবে ‘বাতিল’ ঘোষণা হয়নি। আইপিএলের কোনও কোনও কর্তার অভিমতে, অনুষ্কার সঙ্গে কথা বলতে যেতেই পারেন বিরাট। কিন্তু ম্যাচ শেষে। ম্যাচের মাঝে নয়।

বলা হচ্ছে, আইপিএলের ম্যাচ চলাকালীন কোনও চেনা-পরিচিতের সঙ্গেই কথাবার্তা বলার অধিকার নেই ক্রিকেটারদের। সতীর্থদের সঙ্গেই শুধু কথা বলা যাবে। তার বাইরে বাবা, মা, দর্শক— কারও সঙ্গেই বলা যাবে না। আইসিসি বা দুর্নীতিদমন শাখা কেউ এটা অনুমোদন করে না। বিরাটকে যখন অনুষ্কার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়, ম্যাচ শেষ হয়নি। আর শুধু বিরাটই নন, যুবরাজ সিংহ, দীনেশ কার্তিকদেরও দেখা গিয়েছে আড্ডা দিতে। চিন্নাস্বামীর প্লেয়ার্স এনক্লোজার আর ভিআইপি বক্সের অবস্থান অবশ্য একদম পাশাপাশি। কিন্তু সে সব বিবেচনায় রেখেও আইপিএল কর্তাদের কারও কারও মনে হচ্ছে, বিরাট এটা না করলেই পারতেন। ঘটনা শুধু বিরাটেই আবদ্ধ থাকলে তবু ঠিক ছিল। কিন্তু আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লের মন্তব্যে আগুনে ঘৃতাহুতি হয়। আরসিবি বনাম দিল্লি ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন আইপিএল কমিশনার। সেখানে সাংবাদিকরা ব্যাপারটা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেন, এটা নিয়ে বিরাটের সঙ্গে বেসরকারি ভাবে কথা তিনি বলেছেন। বলেছেন যে, টেকনিক্যালি ম্যাচ শেষ না বলে কারও সঙ্গে কথা বলা যাবে না।

এ দিন সন্ধেয় ফোনে ধরা হলে রাজীব আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমি ঠিক সেটা বলতে চাইনি। মিডিয়া ভুল বুঝেছে। এসিএসইউ সরকারি ভাবে রিপোর্ট না দিলে আমরা কী ভাবে প্লেয়ারকে সতর্ক করতে পারি? নিয়মটাই তো সেটা। তবে হ্যাঁ, রিপোর্ট পেলে ওকে যা বলার বলব।’’ দুর্নীতিদমন শাখার এক কর্তা আবার বললেন, বিরাট টিমের অধিনায়ক। তাঁর জানা উচিত ম্যাচের সময় কোনটা করা যায়, আর কোনটা যায় না। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ম্যাচ চলাকালীন ক্রিকেটারদের সঙ্গে কারওরই দেখা করার অনুমতি নেই। ডিন জোন্স চরম আক্রমণাত্মক। ঘটনার পর একটি চ্যানেলে বলে দেন, ‘‘নিজের বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করবে বলে বিরাট নিজের ইচ্ছেমতো সব করতে পারে না। বিরাট ভুল করেছে। বান্ধবীকে ওর বলা উচিত ছিল সরি ডার্লিং, আমিও চাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ম্যাচটা বৃষ্টিতে আটকে আছে যখন, আমাকে ড্রেসিংরুমেই থাকতে হচ্ছে। ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন যে ওদেরই রাখতে হবে, সেটা আর কত বার বোঝাতে হবে ক্রিকেটারদের?’’

আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল— তারা কি এটা নিয়ে কোনও পদক্ষেপের কথা ভাবছে? এক কর্তা বললেন, রাজীব শুক্লর সঙ্গে এটা নিয়ে বৈঠক দরকার। বিরাটকে কড়া বার্তা ধরানোর এখনও কোনও ইচ্ছে নেই গর্ভনিং কাউন্সিলের। কিন্তু তাঁকে এটা বলা দরকার, ভবিষ্যতে একটু সতর্ক থাকতে।

মাস কয়েক আগে এক ভারতীয় সাংবাদিককে উত্তেজিত মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিরাট। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের হারের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অনুশকা শর্মার উপস্থিতিকে দায়ী করেছিল ‘কুসংস্কারমনস্ক’ দেশের এক অংশ। জবাব বিরাট দিয়েছিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে বসে। আলাদা করে। নতুন উদ্ভুত বিতর্কের উত্তরে ক্যাপ্টেন কোহলি তাঁর কোন ‘স্ট্রোক’টা এ বার ব্যবহার করেন, সেটাই দেখার।



মন্তব্য চালু নেই