দাম কমলো বাজারে

ম্যাগি নুডুলস পরীক্ষাগারে

মাত্রাতিরিক্ত সীসা ও টেস্টিং সল্ট থাকায় ভারতের উত্তরপ্রদেশে ম্যাগি নুডুলস নিষিদ্ধ হওয়ায় পর টনক নড়েছে দেশের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই দেশের পাঁচটি ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের নমুনা সংগ্রহ করে ইতোমধ্যেই নিজস্ব গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ।

গত ২১ মে ভারতের উত্তর প্রদেশে ম্যাগি নুডুলস নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বাজার থেকে সব পণ্য তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বাংলাদেশে ম্যাগির ভবিষ্যৎ কী হবে? এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত ম্যাগির আমদানিকারক সংস্থা নেসলে বাংলাদেশের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসব বিতর্কের মধ্যেই এ সপ্তাহের শুরুতে নিজ উদ্যোগে দেশের বাজারের ইনস্ট্যান্ট নুডুলসগুলো পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় বিএসটিআই। প্রাথমিকভাবে তারা নেসলে বাংলাদেশের ম্যাগি নুডুলস, প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নাটোর অ্যাগ্রো লিমিটেডের মিস্টার নুডুলস, নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডুলস, কল্লোল থাই ফুডের মামা নুডুলস ও ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টের ইফাদ এগি নুডুলসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছে বিএসটিআই।

এ প্রসঙ্গে বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক সেলিম রেজা বলেন, ‘ভারতের উত্তর প্রদেশে ম্যাগি নুডুলস নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা দেশের ইনস্ট্যান্ট নুডুলসগুলোকে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সপ্তাহের শুরুতে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। আসছে সপ্তাহে প্রতিবেদন পেয়ে যাবো বলে আশা করছি। এরপরই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

এদিকে দেশে প্রচলিত ম্যাগি নুডুলসে সীসার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে ম্যাগি নুডুলস কেনাবেচায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসার মন্দাভাব কাটিয়ে উঠার জন্য ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। বর্তমানে ৮ পিস প্যাকেটের মূল্য ১৩০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা ও ৪ পিস প্যাকেটের মূল্য ৬৬ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ দাম কমানো হয়েছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের ম্যাগি নুডুলসে সীসার মিশ্রণ পেয়েছে প্রতি এক মিলিয়ন অংশের (পিপিএম) ১৭ দশমিক ২ ভাগে। যা প্রায় সাতগুণ অনুমোদনযোগ্য সীমায় গিয়ে পৌঁছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (এইচডব্লিউও) হিসাবে, যেকোনো খাবারে প্রতি মিলি লিটারে ০.০১ শতাংশ সীসা থাকতে পারে। কিন্তু ম্যাগিতে প্রাপ্ত সীসার পরিমাণ প্রতি মিলিলিটারে ১৭ ভাগ।

প্রসঙ্গত, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট মূলত কোনো খাবারে মেশানো হয় স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় যা টেস্টিং সল্ট নামে বাজারে পাওয়া যায়। স্বল্প পরিমাণে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট খাবার এবং মানুষের শরীরের পক্ষে নিরাপদ হলেও এর অতিরিক্ত ও দীর্ঘদিন ব্যবহার শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিকারক এই উপাদান সহনীয় পর্যায়ের বেশি মাত্রায় থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীদ বলেন, ‘সীসা সহনশীল পর্যায়ের উপরে থাকলে স্বাভাবিক মানসিক গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকারক। আর শিশুরাই অধিক মাত্রায় নুডুলস খায়। সেজন্য দ্রুত ইনস্ট্যান্ট নুডুলসগুলো পরীক্ষা করা উচিৎ। বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে সত্যিকার তথ্য উঠে আসবে বলে আশা করছি।’



মন্তব্য চালু নেই