মোবাইল ফোন ব্যয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন

মোবাইল ফোনে কম খরচে কথা বলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের উপরে অর্থাৎ প্রথম স্থানে রয়েছে শ্রীলংকার নাম। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় একজন মুঠোফোন ব্যবহারকারীর গড় মাসিক খরচ ২ ডলারের কম। মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে ব্রাজিল। দেশটির একজন মোবাইল ব্যাবহারকারীর গড় মাসিক খরচ ৪৮ ডলার।

এমন তথ্য উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬ : ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ। আর ইন্টারনেটবঞ্চিত একক জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৫ নম্বর।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মোবাইলফোনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে উচ্চ করের বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। মুঠোফোন আমদানিতে সবচেয়ে বেশি কর দিতে হয় এমন ১৫টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এ তালিকার শীর্ষ দেশ হলো ফিজি।

এতে বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের লোকবল সরবরাহের সম্ভাবনায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা দেশ। ব্যবহারকারীর এ সংখ্যা নির্ধারণে বিশ্বব্যাংক ইন্টারনেট ব্যবহারকে অনলাইন ও অফলাইন এ দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে।

সব সময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বা ব্যবহারের সুযোগ আছে, এমন ব্যবহারকারীদের অনলাইন শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। আর কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি, এমন ব্যবহারকারীদের অফলাইন শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে আইসিটি খাতে অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়টিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আইসিটি অবকাঠামো উন্নত না হওয়ার কারণে এসব দেশে ইন্টারনেটের গতি কম, যেটিকে বিশ্বব্যাংক বলছে ‘দ্বিতীয় শ্রেণির ইন্টারনেট’।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৪০ কোটি। এর ৭০০ কোটিই মোবাইল প্রযুক্তির আওতায় আছে। সারা বিশ্বে অনলাইনে যুক্ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩২০ কোটি। এর মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ১১০ কোটি মানুষ। আর ইন্টারনেটবঞ্চিত ‘অফলাইন’ জনগোষ্ঠী ৪০০ কোটি।

এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে ভারতে সবচেয়ে বেশি ১০৬ কোটি মানুষ অফলাইন বা ইন্টারনেট-বঞ্চিত। চীনে এ সংখ্যা ৭৫ কোটি, ইন্দোনেশিয়ায় ২১ কোটি, পাকিস্থানে ১৬ কোটি ৫০ লাখ আর বাংলাদেশে ১৪ কোটি ৮০ লাখ।

অফলাইন জনগোষ্ঠীর হিসেবে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও কঙ্গো।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের জোগানের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের অবদান কম বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

এ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ আইসিটি খাত থেকে আসে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আইসিটি খাতের কর্মসংস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে ৫ নম্বরে। নিচের দিক থেকে এ তালিকার শীর্ষ দেশ লাওস। কর্মসংস্থান তৈরিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে মঙ্গোলিয়া। দেশটির মোট কর্মসংস্থানের ২ দশমিক ৭ শতাংশের জোগান আসে আইসিটি থেকে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে কো-অর্ডিনেটর দিপক মিশ্রা বলেন, বাংলাদেশ সার্বজনীন ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কবে এটি রাতারাতি পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়।

তার মতে, বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তিগুলো গড়ে তুলতে হবে, এজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের সহায়তা করবে।



মন্তব্য চালু নেই