মোবাইল নাম্বারে নয়, কল হবে আইডিতে

সিমকার্ড লাগবে না, কোনো নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বারেরও দরকার হবে না। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট থাকলেই কথা বলা যাবে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে। অবশ্য সেই ব্যক্তির আইডি নম্বর লাগবে। এতে থাকবে না প্রতিদিন মোবাইল অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স করার যন্ত্রণা। বিলুপ্ত হবে ফিচারভিত্তিক হ্যান্ডসেট।

ফলে বর্তমানে প্রচলিত টাইম ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং বা টিডিএম প্রযুক্তির কলড্রপের বিরক্তি পোহাতে হবে না গ্রাহকদের। টিডিএম প্রযুক্তির স্থানে আসবে ইন্টারনেটভিত্তিক আইপিকল। অবশ্য উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিচালনায় সক্ষম হ্যান্ডসেট না থাকলে আইপি প্রযুক্তিতেও পোহাতে হবে কল নিয়ে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা।

বিশ্বের নামি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো আভাস দিচ্ছে, দ্রুত ২০১৬ সাল থেকে ২০২০-এর মধ্যেই ঘটবে প্রযুক্তির এই বড় পরিবর্তন। মোবাইল ফোন অপারেটররা তখন ভয়েস কল, ইন্টারনেট সেবা, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ইত্যাদির বদলে সমন্বিত ডিজিটাল সেবা দেবে। এই অপারেটরদের নামও বদলে ‘ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার’ হয়ে যাবে।

তারানা হালিম বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশকেও প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে। শক্তিশালী ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, ফোরজি প্রযুক্তি নিয়ে আসা, প্রযুক্তির ব্যবহারকে নিরাপদ করতে সমন্বিত পদক্ষেপ সেই প্রস্তুতিরই অংশ।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির উন্নত ও নিরাপদ ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে।

যেভাবে বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার:
বর্তমানে দৈনন্দিন প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন। এতে নির্দিষ্ট গ্রাহক নম্বরে কল করে কথা বলা হয়। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মোবাইল নাম্বার দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রায় সব সুবিধাই পাওয়া যায়। অবশ্য ফোনকলের ক্ষেত্রে কল ড্রপ, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নগতিসহ বিভিন্ন বিরক্তিকর অভিজ্ঞতাও ঘটে গ্রাহকদের। টাইম ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং, সংক্ষেপে টিডিএম প্রযুক্তিতে মোবাইল নাম্বারে ফোন করে কথা বলার এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার হয় ১৯৫৩ সালে। শুরুতে টিডিএম প্রযুক্তিতে শুধু একটি সার্কিটের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক কল আদান-প্রদান করা যেত। কিন্তু বর্তমানের টিডিএম প্রযুক্তি একসঙ্গে যুক্ত করেছে লাখের বেশি সার্কিটকে। এমনকি ডাটা প্যাকেট অ্যাকসেস যুক্ত করে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।

তবে অচিরেই পরিবর্তন ঘটছে এই পদ্ধতিতে। প্রচলন ঘটতে চলেছে ইন্টারনেট প্রটোকল বা আইপি প্রযুক্তির। বিশেষ করে আর্ন্তজাতিক কলের ক্ষেত্রে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল প্রযুক্তির সঙ্গে সবাই ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। ইন্টার ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল এই প্রযুক্তিই ক্রমে ভয়েস কলের মূল প্রযুক্তি হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে কোনো নাম্বারের প্রয়োজন হবে না। ওয়াইফাই হোক, আর বিশেষ কোডের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাই হোক, গ্রাহকের হ্যান্ডসেটে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই চলবে।

প্রয়োজন হবে স্কাইপি, ভাইবারের মতো অ্যাপ্লিকেশনের আইডি। মোবাইল ফোন অপারেটররা তখন নিজেদের গ্রাহকের জন্য পৃথক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে গ্রাহক আইডি দেবে। একাধিক অপারেটর এর মধ্যেই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ প্রযুক্তিতে অচল হয়ে পড়বে পুরনো ফিচার ফোন। অপরিহার্য হয়ে উঠবে আধুনিক স্মার্টফোন। হ্যান্ডসেট নির্মাতারা এ কারণেই কম দামের স্মার্টফোন বাজারজাত করার ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।

স্যামসাং ৭০০০ টাকার মধ্যেই স্মার্টফোন দিচ্ছে। চলতি বছরে বাজারে আসবে নামি কোম্পানিগুলোর আরও কমদামি স্মার্টফোন। টেলিজিওগ্রাফিসহ একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, আগামীতে ৩০০ ডলারের বেশি দামের স্মার্টফোন বাজারে বিক্রিই হবে না। হাজার ডলারের ফোন বাজারে এরই মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করেছে।

টেলিজিওগ্রাফি আরও জানাচ্ছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত টিডিএম ভয়েস কল ছিল প্রায় ৫৬৯ বিলিয়ন মিনিট। একই সময় স্কাইপি, ভাইবারসহ আইপি ফিচার ব্যবহার করে কল ছিল প্রায় ৩৩৫ বিলিয়ন মিনিট। প্রতিষ্ঠানটি পূর্বাভাস দিচ্ছে, ২০১৮ সালের মধ্যেই আইপি কল টিডিএম কলের সমান হবে এবং পরের বছরগুলোতে আইপি কল ছাড়িয়ে যাবে টিডিএম কলকে।

প্রস্তুতি শুরু করেছে মোবাইল ফোন অপারেটররা:
ব্যবসায়িক কারণেই মোবাইল ফোন অপারেটররা এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে নারাজ। তবে একাধিক অপারেটরের কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে জানান, আগামী দিনে টিডিএম প্রযুক্তির হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারা আইপিভিত্তিক বিটিএস বসানোর পরিকল্পনা এবং ম্যাপ সবই প্রায় চূড়ান্ত করেছেন। প্রযুক্তি সেবাদান-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ হবে আইপি প্রযুক্তির প্রস্তুতির বছর। ২০১৭ সালের মধ্যেই যার ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে।-সমকাল



মন্তব্য চালু নেই