মেয়ের বুকের দুধে বেঁচে আছেন বাবা!

শিরোনামটা দেশে অনেকেই হয়ত ভ্রু কুঁচকেছেন। মনে মনে গালি দিচ্ছেন ওই বাবাকে যে তার নিজের মেয়ের স্তন্য পান করছেন। বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন ওই মেয়ের দিকেও যে তার সদ্যোজাত সন্তানের ভাগ থেকে বাঁচিয়ে দুধ খেতে দিচ্ছেন বাবাকে। হয়ত অনেকে ভাবছেন- এসব সংবাদ মাধ্যম গুলোর আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই, যতসব আজগুবি গল্প লিখে যাচ্ছে। কিন্তু খবরের পেছনেও যে খবর থাকে। কেন এ কাজ করছে মেয়েটি? বাবাই বা কীভাবে….? অনেক প্রশ্নই হয়ত জাগছে। কিন্তু কখনো কখনো ছোট্ট একটা অন্যায়ও যে বড় বড় ‘ভালো’ জন্ম দিতে পারে! এখানকার ঘটনাটাও ওইরকমই।

বাবা আর্থার ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছেন। কিন্তু, মেয়ে হেলেন ফিত্‍‌সিমনস বাবাকে হারতে দিতে নারাজ। আর তাই বাবার এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শক্তি জোগাতেই বুকের দুধ দিয়ে চলেছেন।দুই সন্তানের মা, বছর চল্লিশের হেলেন ফিত্‍‌সিমনসের ছোট ছেলের বয়স মাত্র এক। সেই কোলের সন্তানের ভাগ থেকেই বাবাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন হেলেন। কারণ, তাঁর ধারণা, বুকের দুধ খাওয়ালে বাবা আরও কিছু দিন বেশি বাঁচবে। সেটা হতে পারে এক বছর, দু-বছর, বা আরও কয়েক বছর। কারণ মাতৃদুগ্ধই যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও নিরপদ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।

মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, মেলোমা ক্যানসারে আক্রান্ত আর্থার। ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে অস্থিমজ্জায়।হেলেনের রিসার্চের শুরুটাও তখন থেকেই। নেট ঘেঁটে, গবেষণা রিপোর্ট পড়ে আর্থারের মেয়ে দেখেন, ব্রেস্ট মিল্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। বাবাকে সে কথা জানানও। স্ত্রী জেয়ানের সম্মতি নিয়ে, মেয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান আর্থার। তার পর থেকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করছেন এই ক্যানসার রোগী।

চেলটেনহ্যামবাসী হেলেনের কথায়, বাবাকে প্রথমবার যখন গ্লাসে করে বুকের দুধ দিলাম, একটা চমুকু দিয়েই, আমার দিকে মুখ তুলে তাকান। এরপর একগাল হাসি হেসে জানান, খুব ভালো খেতে। বিষয়টা অনেকেই ভালোভাবে নেননি। কিন্তু হেলেনের তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। তার মতে- আপনি কাউকে ভালোবেসে থাকলে তার জন্য অনেক কিছুই করতে পারবেন। কেউ-ই চায় না, তাঁর প্রিয়জন ক্যানসারের মতো একটা অসুখে কষ্ট পাক। তাই বাবাকে ভালো রাখার জন্য এটা তো করতেই পারি। তাতে কে কী ভাবল, বলল, এতে আমার কিছু যায় আসে না।

হেলেন জানান, এভাবেই বিগত ১৬ মাস ধরে তিনি আর্থারের অসুখের চিকিত্‍‌সা করে যাচ্ছেন। হেলেন মনে করেন, বাবার শারীরিক যা অবস্থা, তাতে আরও আগেই মারা যেতে পারতেন। কিন্তু, এখনও যে উনি বেঁচে আছেন, সেটা তাঁর বুকের দুধের জোরেই। ডাক্তাররা জানান, এ ধরনের ক্যানসারে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। উলটো দিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। হাড়গোড় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

হেলেন জানান, নেট নিয়ে সে সময় নাড়াচাড়া করতে করতেই সুইডিশ বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা নজরে পড়ে। তাতে জানানো হয়, মাতৃদুগ্ধে থাকা প্রোটিন ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম। সেটা পড়েই ঠিক করি, এভাবেই বাবার চিকিত্‍‌সা করব। কেমোর পাশাপাশি তখন থেকেই বাবাকে ব্রেস্ট মিল্ক খাওয়াচ্ছি।

হেলেন বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন বাবার রক্তে হু-হু করে বাড়তে থাকা প্রোটিনের মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না-এলেও, অনেকটাই কমে এসেছে। বুকের দুধের এমন ক্ষমতায় ডাক্তাররাও বিস্মিত।



মন্তব্য চালু নেই