মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদন বা মুসলমানি সম্পর্কে ১২টি ভয়ঙ্কর তথ্য

ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন বা ‘হু’-এর মতে, ফিমেল জেনিটাল মিউটেলশন বা সংক্ষেপে এফজিএম হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনও চিকিৎসা-বহির্ভূত কারণে নারীদেহের যৌন অঙ্গের অংশবিশেষ কেটে বাদ দেওয়া হয়।

মূলত মুসলমান সমাজেই এই রীতি প্রচলিত। মহিলাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা এবং যৌনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যেই এই কাজ করা হয়ে থাকে। এই কাজটিকে মূলত ধর্মীয় রীতি বলে মনে করা হলেও, বিশুদ্ধ ইসলামে এইরকম কোনও নির্দেশ নেই। তবে বেশ কিছু অমুসলিম সমাজেও, যেমন‌ কপটিক খ্রিস্টান সমাজ কিংবা কেনিয়ার কিছু খ্রিষ্টধর্মী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত রয়েছে।

আদিযুগেও এফজিএম-এর রীতি প্রচলিত ছিল বলে মনে করা হয়। ইজিপ্টে ফারাওদের আমলেও সম্ভবত এফজিএম করা হত। ইজিপ্ট থেকে এক রাজকুমারীর মমিকৃত দেহ আবিষ্কৃত হয়েছে যাঁর দেহে যৌনাঙ্গ ছেদনের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

প্রাক-ইসলামি ট্রাইবাল রিচুয়ালের অঙ্গ হতেই পারে এই রীতি। প্রাচীন মিশরে এর উপস্থিতি থেকে সেই কথা অনুমান করা যায়। সাব-সাহারান আফ্রিকায় এই রীতি বিশেষভাবে চলিত। সেখানে ট্রাইবাল সমাজের আংশিক বিলোপের কারণে এমন প্রথা চলিত রয়েছে বলে সমাজবিদরা মনে করেন।

এই রীতি মহিলাদের যৌনস্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। যাঁদের যৌনাঙ্গ ছেদন করা হয়, তাঁদের যৌনজীবনে নানা জটিলতা দেখা দেয়। যৌনক্রিয়া, সন্তান ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা কিংবা ঋতুকালীন যন্ত্রণায় তাঁরা ভোগেন।

আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশেই এফজিএম-এর রীতি প্রচলিত রয়েছে। সাধারণত গরমকালে মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদন করা হয়ে থাকে। কারণ এই সময়ে স্কুলে পাঠরত মেয়েদের স্কুল ছুটি থাকে। ফলে যৌনাঙ্গের ক্ষত শুকনোর জন্য বেশ খানিকটা সময় পায় মেয়েরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ১০ কোটি থেকে ১৪ কোটি মহিলা জীবিত রয়েছেন, যাঁদের যৌনাঙ্গ ছেদন করা হয়েছে।

স্ত্রী যৌনাঙ্গ ছেদনের মোটামুটি ৪টি প্রক্রিয়া প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে কোনওটিতে ভগাঙ্কুর (ক্লিটোরিস), কোনওটিতে বা ভগোষ্ঠ (লেবিয়া মাইনরা)-এর অংশবিশেষ কেটে বাদ দেওয়া হয়।

মোটামুটি ভাবে একেবারে শিশু বয়স থেকে শুরু করে বছর ১৫ বয়সের মধ্যে মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদন হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়েই এই বিষয়ে মেয়েদের সম্মতির তোয়াক্কা করা হয় না। অবশ্য একেবারে শিশুদের সম্মতি গ্রহণের প্রশ্নও ওঠে না।

আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য মিলিয়ে মোট ২৯টি দেশ রয়েছে, যেখানে মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদন হয়ে থাকে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ এফজিএম-এর ঘটনাই ঘটে মাত্র ৫টি দেশে।

সারা পৃথিবীতে যত এফজিএম ঘটে, তার মাত্র ১৮ শতাংশ পরিচালনা করেন ডাক্তাররা। বাকি ৮২ শতাংশ এফজিএম-ই হয়ে থাকে হাতুড়েদের হাতে।

বিভিন্ন দেশেই বিভিন্ন সময়ে এই বীভৎস রীতি বন্ধ করার আওয়াজ উঠেছে। ব্রিটেনে ১৯৮৫ সালেই এই রীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘের তরফেও এই রীতি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই রীতি যে আসলে পুরুষতন্ত্রের জয়ধ্বজা ওড়াচ্ছে, তা নিয়ে কারোর মনে সংশয় নেই কোনও।এবেলা



মন্তব্য চালু নেই