মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্নে বিভোর সেই আবুল

এখন আর তাকে কেউ বৃক্ষমানব বলবে না। অনেক আগেই তাঁর হাত-পায়ের শেকড়গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে সপ্তাহ খানেক হলো। অপারেশনের সময় হাতের দাগগুলোও আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাবে। এ জন্য তাকে এক ধরনের মলম ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে।খবর ঢাকাটাইমসের।

ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হলেও এখন পর্যন্ত হাতের আঙ্গুলগুলো ভাজ করতে পারেন না আবুল বাজনদার। তবে তাতে তাঁর দুঃখ নেই। ডাক্তারদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতারও যেন শেষ নেই। এই অবস্থায় আসতে পারবেন তা কোনো দিন ভাবেননি বলে জানান।

গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আবুল বাজনদার বলেন, ‘ভাই আমি এখন ভালো আছি। ডাক্তাররা বলেছে, আস্তে আস্তে আমি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবো।’ চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চাই। এটাই আমার স্বপ্ন তবে জানি না পারবো কি না।’

তার দুই পায়ের ব্যান্ডেজ এখনো রয়েছে। তবে এতে তাঁর হাঁটা চলায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজনদার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫১৫ নম্বর কেবিনে বসে দুনিয়ার সব খবর রাখছেন। তাঁর কক্ষে থাকা কম্পিউটার মনিটরে ডিস এন্টেনার সংযোগে সব খবরাখবরই তিনি দেখতে পান। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক রয়েছে তাঁর স্ত্রী হালিমা বেগম ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে। দীর্ঘ দিন পর সম্প্রতি তাঁর মা বাড়ি ফিরে গেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে কি করবেন ভাবছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কবির স্যার (চর্ম ও যৌন বিভাগের অধ্যাপক কবির চৌধুরী) যে টাকা দিয়েছে (ছয় লাখ টাকা) তা দিয়ে যে জমি কিনেছি সেখানে একটি বাড়ি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকবো। এখন তো আর কাজ করতে সমস্যা হবে না।’

কবির চৌধুরীর দেয়া এই টাকা দিয়ে এরই মধ্যে খুলনার পাইকগাছা থানার সরলা গ্রামে সাড়ে তিনকাঠার একটি জায়গা কিনেছেন। কবে পুরোপুরি সুস্থ্য হবেন? ডাক্তাররা কী বলছেন? জবাবে আবুল বলেন, ‘আমার সুস্থ হতে এখনও তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। হাতে যে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে তা সারতে একটি মলম ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

আলাপচারিতায় পৈত্রিক কিছু জায়গা বেহাত হওয়ার কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে আবুল বলেন, ‘গ্রামে আমাদের কোন জায়গা জমি নেই। আমার আব্বার চার বিঘা ১৪ শতক জমি ছিল পাইকগাছা থানার রামনাথ পুর মৌজায়। ওই জমি বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান সাদেকুজ্জামান দখল করেছেন। এখন তিনি পলাতক থাকলেও তার লোকজন ওই জমি ভোগ দখল করছে। সেখানে আমরা কেউ যেতে পারিনা। প্রফেসার কবির চৌধুরী আমাকে যে টাকা দিয়েছে তা দিয়ে একটি জমি কিনেছি এবং ওই জমিতে আমার একটি বাড়ি করার ইচ্ছা আছে। আর বাড়িতে গিয়ে আমার চালের ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে।’

রুমের কম্পিউটার মনিটরের দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কম্পিটারের এই মনিটরটা অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী সাংবাদিক ফজলু ভাই কিনে দিয়েছেন। তিনিই আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর ফ্যানটি কিনে দিয়েছেন কাজী বাহার ভাই। তিনি পুরান ঢাকার বংশালের ব্যবসায়ী।’

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আবুল এখন সুস্থ আছে। ওর হাতের ড্রেসিং করা হয়েছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো ছয় মাস লাগবে। এর পরেও তাকে ফলোআপে রাখতে হবে।’

খুলনার পাইকগাছার ২৬ বছর বয়সী আবুল বাজানদার ১০ বছর ধরে হাতে-পায়ে গাছের মতো শেকড় গজানোর বিরল রোগে আক্রান্ত। তাঁর বাবার নাম মানিক বাজানদার। মায়ের নাম আমেনা বেগম। পাইকগাছা বাসস্ট্যান্ডের কাছে তাদের বাড়ি।

তিনি চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই