মেহেরপুরের গাংনী পৌর মেয়রকে অপসারণের নির্দেশ

মেহেরপুরের গাংনী পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহমেদ আলীকে গাংনী পৌরসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

গত ২৮ মে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সরোজ কুমার নাথের স্বাক্ষর করা পত্রে তাকে অপসারণ করা হয়।

বিকালে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ফ্যাক্স বার্তা মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এলে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকসহ সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে জানাজানি হয়।

মেয়রকে অপসারণ করার নির্দেশ পত্রের অনুলিপি অপসারিত মেয়র আহমেদ আলী, নির্বাচন কমিশন সচিব, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে দেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্য ১৮ প্রকল্পে বিধি বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে ১৬ কাজের বিল বাবদ ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ১১৭ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে। মাটির কাজে পরিমাপ নির্ণয় ছাড়াই ঠিকাদারকে ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৮ টাকা পরিশোধ করে পরস্পর যোগসাজস করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১১/১২ অর্থ বছরে এডিবির অর্থে বাস্তবায়িত ৪৬ প্রকল্পের তদন্ত কমিটির পরিমাপের ভিত্তিতে বিনা কাজে ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৬২৬ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ধারা ৩২(১) (ঘ) বিধান মোতাবেক আহমেদ আলীকে অপসারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, মেয়র আহমেদ আলীর অপসারণের বিষয়টি কয়েকদিন ধরে জেলাবাসীর মাঝে ছড়িয়ে পড়লেও কোনো পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সত্যতা যাছাই করার জন্য।

এ ব্যাপারে মেয়র আহমেদ আলী জানান, ‘আমাকে অপসারণ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি আইনের আশ্রয় নিয়ে মোকাবিলা করবো। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় যে অভিযোগ এনেছেন আমি তার সঠিকভাবে জবাব দিয়ে আমার মেয়র পদ ফিরে আনবো।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে গাংনী পৌর সভা স্থাপিত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বিজয় অর্জন করেন। মাত্র কয়েক বছর পর তৎকালিন পৌর চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামকে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা বোমা ও গুলি করে হত্যা করে। এরপর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আহমেদ আলী অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পরই পৌরসভার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক উভয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন মেয়র আহমেদ আলী।

২০১১/১২ অর্থ বছরে এডিবির অর্থে বাস্তবায়িত ৪৬ প্রকল্পের তদন্ত কমিটির গ্রহণ করা পরিমাপের ভিত্তিতে বিনা কাজে ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৬২৬ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে কাউন্সিলররা জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়ে মেয়রকে অপসারণের দাবি জানান। এর পর থেকে অধিকাংশ কাউন্সিলর পৌরসভার কোনো কাজে অংশ নেন না বলে জানান কাউন্সিলর নবীর উদ্দীন।

এদিকে, কয়েক জন কাউন্সিলর বাদে অধিকাংশ কাউন্সিলর না যাওয়ায় পৌরসভার উন্নয়ন কার্জ থমকে যায়। কাউন্সিলরদের দেয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিত্বে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সচিব পর্যায়ের একাধিক তদন্ত টিম মেয়রের বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করে। অবশেষে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।



মন্তব্য চালু নেই