মেলামেশায় ছড়ায় যৌন রোগ গনোরিয়া

গনোরিয়া একটি পরিচিত কষ্টদায়ক যৌন সংক্রামক রোগ। এই যৌন রোগটি “নাইসেরিয়া গনোরিয়া” নামক এক প্রকার ব্যকটেরিয়ার কারণে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশার ২-১০ দিন পরই এ রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়।

গনোরিয়ার জীবাণু ‘নাইসেরিয়া গনোরিয়া’ দীর্ঘদিন শরীরের বাইরে টিকে থাকতে পারে না। এরা বেঁচে থাকে কেবল নিবিড় যৌন মিলনের মাধ্যমে এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হয়ে।

পুরুষের যৌনাঙ্গ দিয়ে পুঁজ (Pus) বের হওয়া, প্রসাবে জ্বালাপোড়া এ রোগের উপসর্গ। প্রকৃত পক্ষে এটি একটি ব্যকটেরিয়া ঘটিত জীবাণুবাহিত রোগ।

এটা পুরুষাঙ্গ, সারভিক্স বা জরায়ুর ছিদ্র, রেকটাম মলাশয় বা পায়ু, গলা ও চোখকে আক্রান্ত করতে পারে। এই ইনফেকশনজনিত কারণে বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে।

সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষরাই এই যৌনরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শুধু মাত্র নারী ও পুরুষের মেলামেশার কারণেই এ রোগ ছড়ায়।

গনোরিয়ার উপসর্গ

পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন মিলনের ২ থেকে ১০ দিন পর রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বালা পোড়া, পুঁজ বের হওয়া, বারবার প্রস্রাবের ইচ্ছা করে। মূত্রনালীতে প্রদাহের কারণে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা করে।লিঙ্গপথে রস নিঃসৃত হয়।যৌনাঙ্গের সংক্রমণের ফলে এ রস প্রথমে পানির মতো থাকে।

পরে ঘন, সবুজাভ-হলুদ হয়। তলপেটে ব্যথা, পুজ হবে, মিলনের সময় ব্যথা, অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া, এপিডিডাইমিসে প্রদাহের কারণে তীব্র ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসে।

নারীর ক্ষেত্রেও যোনিপথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ হয়। যৌনাঙ্গ সংক্রমণের কারণে যোনির ওষ্ঠে লাল, দগদগে ঘা হয়। ঘন ঘন প্রস্রাবের ইচ্ছা, প্রস্রাবে যন্ত্রণা, ডিম্বনালীতে প্রদাহ, বার্থোলিন গ্রন্থির প্রদাহ, তলপেটে ব্যথা, মাসিক অনিয়মিত ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়।

সমকামী : পায়ুপথে যৌনসঙ্গমের কারণে সমকামীরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে তাদেরও মলনালীতে তীব্র ব্যথা হয়।

ওরাল সেক্স : মুখ মৈথুনে (ওরাল সেক্স) অভ্যস্তদের মুখে সংক্রমণ তথা ঘা সৃষ্টি হয় এবং গলাব্যথা হয়। দীর্ঘদিনের সংক্রমণের কারণে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ, ত্বকে ক্ষত, সেপটিসেমিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ হয়। অনেক সময় হৃৎপিণ্ড ও লিভারে ক্ষতির আশংকা থাকে।

গর্ভাবস্থায় : গনোরিয়ার জীবাণু গর্ভবতী নারীদের জননতন্ত্রের মধ্যে বিচরণ করে ডিম্ববাহী নালীতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে নারীর বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হতে পারে।

এছাড়া গর্ভাবস্থায় নারীরা গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশু জন্মের সময়ে মায়ের যোনি থেকে তার চোখে সংক্রমণ হতে পারে। শিশুকে চিকিৎসা না করলে তার চোখে প্রদাহ হবে এবং সে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা : এক্ষেত্রে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস শুনতে হবে। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যদি স্বল্পস্থায়ী আক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা থেকে নিঃসরিত পদার্থ এবং নারীদের মূত্রনালি ও জরায়ু নিঃসরিত পদার্থ পরীক্ষা করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি হলে প্রস্টেটগ্রন্থি ম্যাসাজের পর নিঃসরিত পদার্থ পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়াও কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা : সাধারণত পেনিসিলিন ব্যবহারে সংক্রমণ সেরে যায়। পিনিসিলিন রেডিস্টেন্ট ব্যক্তিকে সেনসিটিভ ওষুধে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। জটিলতাহীন গনোরিয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত একক মাত্রায় উপযুক্ত জীবাণুবিরোধী বা অ্যান্ট্রিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ বেশ ভালো কাজ দেয়। এ ছাড়া অবস্থা বেগতিক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাজ করাই উত্তম।

ডা. আফরোজা খানম, প্রধান চিকিৎসক

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), দিলকুশা, ঢাকা



মন্তব্য চালু নেই